বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে বাস্তবে কোনো অগ্রগতি হয়নি। সংশ্লিষ্ট বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বস্তুত এ বিষয়ে এখনো এক ধরনের স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে তৎপরতা এখনো অব্যাহত আছে; যদিও এখন পর্যন্ত বিএনপি জোর দিচ্ছে জামিনের ওপর। জামিনের আবেদন নিয়ে আজ-কালের মধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন দলের আইনজীবী নেতারা।

অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও মন্ত্রীরা এখনো ঘুরেফিরে ‘প্যারোলে’র (শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি) কথাই বলছেন। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগে প্যারোলের আবেদন আসুক, পরে যৌক্তিকতা দেখে সিদ্ধান্ত হবে। আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, রবিবার পর্যন্ত খালেদা জিয়ার প্যারোলের আবেদন তাঁরা পাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আইনি প্রক্রিয়ায় ফল না হলে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে প্যারোল অথবা সাজা স্থগিতের জন্য আবেদন করা হতে পারে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী সরকার বিশেষ বিবেচনায় সাজা স্থগিত করতে পারে। 

পরিবার ‘রাজনীতি’ নয়, খালেদা জিয়ার জীবন বাঁচানোই মুখ্য বলে মনে করছে। ফলে এখনো দলীয় সিদ্ধান্ত তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত তারা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। ওই পরিস্থিতিতে পরিবারই প্যারোলের আবেদন করতে পারে। তবে পারিবারের ওই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত হতে রাজি নয় বিএনপি।

দলের নেতাদের সন্দেহ আছে, প্যারোলের আবেদন করা হলে সরকার কিছু শর্ত যুক্ত করে দেবে। এর ফলে ভবিষ্যতে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা এবং রাজনীতি করা কঠিন হয়ে যাবে। তাঁদের মতে, যেকোনা উপায়ে খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন’ ভাবমূর্তি নষ্ট করাই সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য। তাই এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে দলগতভাবে জড়িত হতে রাজি নয় বিএনপি।

দলীয় সূত্র মতে, এমন সন্দেহ থেকেই বিএনপির আপাতত সিদ্ধান্ত হলো গত ১১ ফ্রেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্যের কাছে খালেদা জিয়ার পরিবারের করা আবেদনের ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করানো। ওই আবেদনে উন্নততর চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর সুপারিশের কথা বলা হয়েছে। আবেদনে পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেন খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর ব্যাপারে সরকারের কাছে সুপারিশ করে। এখন খালেদার জামিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত তাঁর স্বাস্থ্যগত প্রতিবেদন চাইলে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ শুধু তা দাখিল করতে পারে। কিন্তু বিএনপি এ বিষয়টির ওপর নির্ভর করেই খালেদার মুক্তির পথ বের করতে চাইছে। তবে দলটির আইনজীবী নেতারা জানেন, খালেদার মুক্তির বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই। সে কারণেই সরকারপক্ষকে নমনীয় রাখতে তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি।

গত শুক্রবার এ জন্যই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরদিন ফখরুল জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

খালেদা জিয়ার আইনজীবী এবং বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের তিন নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন এবং অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠকে জানান, আগামী মঙ্গল-বুধবারের মধ্যেই তাঁরা হাইকোর্টে জামিন আবেদন করবেন। মওদুদ আহমদ বলেন, ‘মির্জা ফখরুল কথা বলেছেন। কিন্তু ফল কিছু পাওয়া গেছে বলে শুনিনি।’ তিনি বলেন, ‘সব কিছু এক জায়গা থেকে হয়। অন্যদের ক্ষমতা কী আছে জানি না।’

খন্দকার মাহবুব হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার প্রকৃত স্বাস্থ্যগত রিপোর্ট দিলে তাঁর জামিন আটকানোর কথা নয়। তা ছাড়া পরিবার তো এ জন্যই আবেদন করেছে। এখন সরকার রাজনীতি করতে চাইলে সেটি অন্য কথা।’   

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘স্বাস্থ্যগত কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া উচিত।’ তাঁর মতে, সব কিছু নিয়ে রাজনীতি করলে একসময় রাজনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রীর জামিনের বিষয়ে পরিবারের সদস্যদের আবেগের বিষয়টি অত্যন্ত স্বাভাবিক।’