অধ্যাপক ডা. এম এস জহিরুল হক চৌধুরী

স্ট্রোক মস্তিষ্কের একটি রোগ, যাতে রক্তনালির জটিলতার কারণে হঠাৎ করে মস্তিষ্কের একাংশের কার্যকারিতা হারায়। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোক হার্টের কোনো রোগ নয়।

স্ট্রোকের লক্ষণগুলো : হঠাৎ করে শরীরের একাংশ অবশ বা দুর্বল হয়ে যাওয়া, মাথাব্যথা ও বমি হওয়া, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া বা একেবারেই কথা বলতে না পারার মতো ব্যাপারগুলো ঘটে।

স্ট্রোক হলে তাৎক্ষণিক করণীয় : কোনো রোগীর ক্ষেত্রে উপরের লক্ষণগুলো দেখা দিলে বুঝতে হবে, তার স্ট্রোক হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আতঙ্কিত না হয়ে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। প্রয়োজনে নিকটস্থ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া উচিত। সম্ভব হলে মস্তিষ্কের ঈঞ ঝপধহ করে স্ট্রোকের ধরন বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোক দুধরনের হয়। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ব্যাহত হওয়ার জন্য (Ischemic stroke) অথবা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের জন্য (Hemorrhagic stroke) এবং যার চিকিৎসা পদ্ধতিও ভিন্নতর।

জরুরি চিকিৎসা : অজ্ঞান রোগীর ক্ষেত্রে_শ্বাসনালি, শ্বাস-প্রশ্বাস ও রক্ত সঞ্চালন নিয়মিত রাখা; রোগী একদিকে কাত করে, বালিশ ছাড়া মাথা নিচু করে শোয়াতে হবে; চোখের যতœ নিতে হবে; মূত্রথলির যত্ন (প্রয়োজনে ক্যাথেটার দিতে হবে); খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে। স্ট্রোকে আক্রান্ত সব রোগীর হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয় না। তবে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, খিঁচুনি, রোগী অজ্ঞান হলে অথবা স্ট্রোকের সঙ্গে অন্যান্য রোগ, যেমন-উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি থাকলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন। চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো, কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং পরবর্তীকালে যেন স্ট্রোক না হয়, তার ব্যবস্থা করা (Secondary stroke prevention)।

প্যারালাইসিসে মুখ বেঁকে গেলে করণীয় : বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা এবং ফিজিওথেরাপি নিতে হবে।

স্ট্রোকের হার এবং ঝুঁকি : আমাদের দেশে স্ট্রোকের হার প্রতিহাজারে ৫ থেকে ১২ জন। প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ ঝুঁকির মধ্যে আছে।

স্ট্রোক প্রতিরোধের উপায় : স্ট্রোক অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা যায়। স্ট্রোক প্রতিরোধে প্রয়োজন সচেতনতা। যেমন-রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান পরিহার করা, রক্তের চর্বি নিয়ন্ত্রণ, শারীরিক ব্যায়াম নিয়মিত করা, ওজন ঠিক রাখা, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ শাকসবজি, সতেজ ফলমূল খাওয়া।

সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয় যতজন : যথাসময়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। চিকিৎসা করলে ৩০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হয় আর ৩০ শতাংশ রোগী পক্ষঘাতগ্রস্ত হয়ে থাকে।

লেখক : অধ্যাপক; ক্লিনিক্যাল নিউরোলজি বিভাগ, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতাল