প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। নতুন ছয়টি দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এই ঘোষণা দিল সংস্থাটি।

শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে হু’র প্রধান ড. টেড্রস অ্যাডহানম গেব্রেইয়েসুস বলেছেন, আমরা এ বিপদকে খাটো করে দেখতে রাজি নই। এ কারণেই আমরা বলছি, এ ভাইরাসের বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। আমরা সতর্কতার মাত্রা ‘উচ্চ’ থেকে ‘সর্বোচ্চ’ ধাপে নিয়ে গেছি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় চীনে ৩২৯ জন নতুন রোগী পাওয়া গেছে, যা এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম। চীনে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ৭৮ হাজার ৯৫৯, মৃত্যু হয়েছে প্রায় ২৮০০ মানুষের। বিশ্বের ৫৪টি দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৬৯৪ জন। এরই মধ্যে মারা গেছে ২ হাজার ৮৬১ জন। 

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, অন্ততটি ৫৭টি দেশ করোনাভাইরাস আক্রান্ত। এক এক করে সংক্রমণের খবর মিলছে বেলারুশ, লিথুয়ানিয়া, নিউজিল্যান্ড, নাইজিরিয়া, নেদারল্যান্ডসের মতো দেশ থেকেও। তাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সঙ্কট সর্বোচ্চমাত্রা ছুঁয়েছে।

আক্রান্তের হিসেব অনুযায়ী সব চেয়ে খারাপ পরিস্থিতি ইতালির উত্তর অংশের। সেখানে ৬৫০ জনের শরীরে ভাইরাস মিলেছে। কিন্তু আশার কথা শোনাচ্ছেন ইতালির সরকারি কর্মকর্তারা। তাদের কথায়, অনেকের দেহে ভাইরাস মিললেও তা শরীরস্বাস্থ্য তেমন কাবু হয়ে পড়েনি। মোটের ওপরে ঠিক আছেন তারা।

করোনা সন্দেহে জার্মানিতে ‘নজরবন্দি’ রাখা হয়েছে হাজার খানেক বাসিন্দাকে। যে কোনো ধরনের জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সুইজারল্যান্ড। প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ জানানো হয়েছে, হাজারের বেশি মানুষ ভিড় করতে পারেন; এমন ধরনের কোনো অনুষ্ঠান ১৫ মার্চ পর্যন্ত করা যাবে না। আগামী সপ্তাহ থেকে ‘জেনেভা মোটর শো’ শুরু হওয়ার কথা ছিল। সেই অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। 

জাপানেও আজ থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত ‘টোকিয়ো ডিজনিল্যান্ড’ ও ‘টোকিয়ো ডিজনি-সি’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার জনপ্রিয় গানের দল কে-পপও তাদের কনসার্ট বাতিল করে দিয়েছে। এপ্রিল মাসে ওই কনসার্ট হওয়ার কথা ছিল। চীনের সঙ্গে ভারতের বিমান যোগাযোগ বন্ধই রয়েছে। এবার জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানেও সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করল ভারত সরকার। ভারতের এ পর্যন্ত তিন জনের (সকলেই চীনফেরত) শরীরে ভাইরাসটি মিলেছিল। তারা এখন সুস্থ। 

করোনাভাইরাস চীনের মহামারি আকার ধারণ করেছে। আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ছেই। তবে দৈনিক মৃত্যু-হার কমেছে। কিন্তু দীর্ঘ বন্দি-জীবনে হাঁফিয়ে ওঠেছেন উহানের বাসিন্দারা। ২৯ বছর বয়সি তরুণী গুয়ো জিং বলেন, আরো একটা মাস এভাবে কাটাতে হলে অসুবিধা নেই। খাবার মজুত রয়েছে। কিন্তু তার পরে কী হবে ভেবে ভয় লাগছে। 

আগে তিন দিন অন্তর এক দিন কমপাউন্ড থেকে বের হতে পারতেন উহানের বাসিন্দারা। মৃতের সংখ্যা ২৫০০ পেরিয়ে যাওয়ার পরে এখন সেটাও নিষেধ। হুবেই প্রদেশের উহানে এভাবেই দিন কাটাচ্ছেন ১ কোটি ১০ লক্ষ বাসিন্দা। আর এক বাসিন্দা প্যান হংশেং বলেন, বাড়িতে মজুত রাখা খাবার শেষ হয়ে গেলে কী করব, কোথা থেকে কিনব, কিছু জানি না। স্ত্রী, দুই শিশু-সন্তানকে নিয়ে উহানে থাকেন প্যান। ছোট জনের বয়স ৩ বছর তিনি বললেন, আর ক’দিন বাদেই বাচ্চার দুধ ফুরিয়ে যাবে। নিজের শহরেই নিজেকে শরণার্থী মনে হচ্ছে।