ইরানে অন্তত ২৩ জন সাংসদসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে সে দেশের ধর্মীয় সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আল খোমেনির পরামর্শদাতাদের একজনের মৃত্যুর পর ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা সরকারিভাবে ৭৭ জনের কথা বলা হচ্ছে।
তবে ইরানের সরকারবিরোধীদের দাবি, করোনাভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি বলে লজ্জাজনক দাবি করছেন আয়াতুল্লাহ আল খোমেনি। গতকাল মঙ্গলবারই দ্য পিপল’স মুজাহিদিন অর্গানাইজেশন অব ইরান (পিএমওআই) জানিয়েছে, ইরানে অন্তত এক হাজার দু’শ জনের প্রাণহানি ঘটেছে করোনাভাইরাসের আক্রমণে। জানা গেছে, প্রতিবেদন প্রকাশ করা সাইটটটি বিদেশ থেকে চালানো হয়।
পিএমওআই আরো দাবি করেছে, কওম এলাকায় তিনশ জন, তেহরানে ২১৫, রাস্ট-এ ৭০, লাইজানে ১২, আসতানেহ ৬, মাশহাদ এলাকায় ৬০, ইসফাহানে ৪৩, ২৩ জন কাশানে, ডাস্টগের্ড এলাকায় ১০ জন, জর্জান এলাকায় ৫৪, ৪৫ জন আরাকে, আরো ৪৫ জন কিরমানশায়, সিরাজে ৩৮, ৩৯ জন কারাজে, খুররামাবাদে ২৩, কাজভিনে ২০, জাহেদানে ১০, ইরানশহর-এ ১৬, বুশেহর-এ ১২ এবং মাজানদারে প্রদেশে শতাধিক মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
এছাড়া আরদাবিল, জাঞ্জান, খুররামদারেহ, বানেহ, আজাদশহর, গনবাদ, আরমিয়া, সালেহশহর, আহভাজসহ আরো বিভিন্ন শহরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান জানা যায়নি।
ওই প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয়, ইরানে গণহারে ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। মিথ্যা তথ্য দেওয়ার কারণে ভাইরাসটি ব্যাপক থেকে ব্যাপকতরভাবে ছড়িয়ে পড়বে। ইরানের সীমা অতিক্রম করে এটি সারাবিশ্বে ছড়িয়ে যাবে। অথচ কোমেনি লজ্জজনকভাবে বলছেন, এটি ব্যাপকহারে ছড়ায়নি এবং এটি বড় ধরনের বিপর্যয় নয়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির মুখপাত্র আলি রাবিয়ী বলেছেন, ইরান সরকার করোনা ইস্যুতে একেবারে স্বচ্ছভাবে সব তথ্য প্রকাশ করবে।
তবে পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার (বিরোধীদলীয়) মাসউদ পিজেসকিয়ান বলেছেন, হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভীড় লেগেছে। নতুন করে আসা রোগীদের জন্য কোনো আসন নেই। এটা জোকস নয়। ১৫ দিনের জন্য দেশের ভেতর সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকলে কী ঘটতে পারে, তার কল্পনারও বাইরে।
কওম এলাকা থেকে করোনা ছড়িয়ে পড়ার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রথম দিনই আমরা পদক্ষেপ নিলে দেশজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়তো না। তবে সঠিক সংখ্যা জানা যাচ্ছে না। কারণ, সবার মধ্যে লক্ষণ দেখা দিচ্ছে না। আমরা হয়তো ৯৫ জনকে শনাক্ত করতে পারছি, যাদের মধ্যে দু’জন মারা যাচ্ছে। তারপর বলা হচ্ছে, একশ জনে দু’জন মারা গেছেন।
পার্লামেন্টের আরেকজন সাংসদ বাহরাম পারসাই বলেন, আমাদের চিকিৎসকদের সহায়তায় যদি বিশ্ব এগিয়ে না আসে, আমরা হেরে যাবো।
এনসিআরআই-এর মরিয়ম রাজাভি বলেন, এখানকার নেতা এবং কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য কেবল ক্ষমতায় থাকার। মানুষের বেঁচে থাকা, স্বাস্থ্য এবং মূল্যবোধের বিষয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। বাইরের দেশের সঙ্গে যুদ্ধ, গৃহে দমন, দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং অসুস্থতার ফলে ইরানিরা বর্তমান মোল্লাদের শাসনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।