করোনাভাইরাস সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। এই মারণ ভাইরাসটি ভয়াল থাবা বসিয়েছে উহান, ইতালি, ফ্রান্স, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন ও জার্মানিতে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিছেন চীনের উহানে। সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো, যে দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি তাণ্ডব চালিয়েছে; সেই দেশগুলো ৩০ থেকে ৫০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত। আরো একটি জিনিস লক্ষণীয় তা হলো আবহাওয়ার মিল। ভাইরাস কবলিত এলাকাগুলোর তাপমাত্রা এখন আছে পাঁচ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। সেসব অঞ্চলে স্পেসিফিক ও অ্যাবসলিউট; এই দুই ধরনের আর্দ্রতাও রয়েছে কম।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, শিরাজ মেডিক্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটি, শাহিদ বেহেস্তি মেডিক্যাল সায়েন্সেস ইউনিভার্সিটির গবেষকগণের একটি গবেষণাপত্রে এই বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ৩০ থেকে ৫০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত শহর ও অঞ্চলগুলোতে এই ভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়েছে।
চীনের উহন রয়েছে ৩০ দশমিক ৫৯২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস উত্তর অক্ষাংশে। চীনের এই শহরটিতে সবচেয়ে বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জাপনের টোকিও রয়েছে ৩৫ দশমিক ৬৭৬২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। এই শহরটিও রয়েছে করোনার ব্যাপক ঝুঁকিতে। ইতালির লম্বার্ডি নামক শহরটি রয়েছে ৪৫ দশমিক ৪৭৯১ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। সেখানেও ছড়াচ্ছে করোনা। তবে চীনের পর এই দেশটিতেই করোনা সবচেয়ে ভয়ংকর আঘাত হেনেছে। ইরানের কোমে শহরেও আঘাত হেনেছে করোনা। এই শহরটি অবস্থিত ৩৪ দশমিক ৬৪১৬ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। দক্ষিণ কোরিয়ার দায়েগু শহরের একটি চার্চ থেকে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এই শহরটি অবস্থিত ৩৫ দশমিক ৮৭১৪ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। স্পেনেও ছড়িয়েছে করোন। এই দেশটির মাদ্রিদ শহরটি অবস্থিত ৪০ দশমিক ৪১৬৮ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে।
গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাস কবলিত এলাকাগুলোর আবহাওয়াও একই রকম। ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি মিল রয়েছে তাপমাত্রা আর আদ্রতায়। তপমাত্রা রয়েছে পাঁচ থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গবেষকেরা চীনের উহানের চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের তাপমাত্রার গড় বের করেন। তারপর নতুন করে ভাইরাস কবলিত এলাকাগুলোর ফেব্রুয়ারির মাসের তাপমাত্রার গড় বের করেন। এরপর সেই তাপমাত্রার তুলনা করেন এবং মিল খোঁজে পান। আর্দ্রতাতেও খোঁজে পান মিল।
বিমানবন্দরের আবহাওয়া স্টেশনগুলো গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে চার থেকে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে নগরীর তাপমাত্রা কিছুটা বেশি ছিল। শহরগুলোতে গড় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় পাঁচ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেই তাপমাত্রার হিসেবে গবেষকরা জানিয়েছেন, মার্চ আর এপ্রিল মাসে তাপমাত্রার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বৃটেন আর সেন্ট্রাল ইউরোপ।
গবেষাণাপত্রে বলা হয়, ২০১৯ সালের মার্চ ও এপ্রিলের তাপমাত্রার ডেটা ব্যবহার করে বলা যায়, বর্তমান করোনা কবলিত এলাকাগুলোর ঠিক উত্তরে করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি ছড়িয়ে পড়তে পারে। ওই অঞ্চলগুলোর মধ্যে হতে পারে, মাঞ্চুরিয়া, মধ্য এশিয়া, ককেশাস অঞ্চল, পূর্ব ইউরোপ, মধ্য ইউরোপ, ব্রিটিশ ইসলেস, উত্তর-পূর্ব ও মধ্য-পশ্চিমা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটিশ কলম্বিয়া। যাইহোক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে এই পূর্বাভাস ঠিক নাও হতে পারে। উহানে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পর হয়তো করোনার আক্রান্তের হার কমে আসছে।
সম্প্রতি করোনা হানা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে। সেই অঞ্চলটি রয়েছে ৪৭ দশমিক ৭৫১১ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। জার্মানির নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়ায়ও করোনা থাবা বসিয়েছে। এই অঞ্চলগুলোও রয়েছে ৫১ দশমিক ৪৩৩২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে। গুগল অনুযায়ী সেসব অঞ্চলগুলোতে তাপমাত্রা রয়েছে চার থেকে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। তাই বলা য়ায়, করোনা যেসব অঞ্চলে হানা দিচ্ছে সেসব অঞ্চলগুলো ৩০ থেকে ৫০ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে অবস্থিত। আর তাপমাত্রার গড় একই রকম।
এদিকে,
২০ ডিগ্রি থেকে ২৬ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশে বাংলাদেশের অবস্থান। বাংলাদেশের বর্তমান তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাই এই দুই বিষয় বিবেচনায় নিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশ বর্তমানে কম ঝুঁকিতে রয়েছে! তবে সময়ই হয়তো বলে দেবে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে।