দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যানে বনের পশুপাখি বৃদ্ধিতে এবার ৭৫ হাজার ফল,কাঠসহ বিভিন্ন প্রকার গাছের চারা রোপণ করা হবে। ইতোমধ্যে বনের পাশে একটি নার্সারীতে গাছের চারা প্রস্তুত করা হয়েছে। টেকসই বন জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় এই গাছগুলো রোপণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিরামপুর চরকায় রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার। এছাড়াও মুজিব বর্ষে উপজেলায় ২০ হাজার করে গাছের চারা রোপণ করা হবে। সংশ্লিষ্টদের দাবি এসব গাছ রোপণ করলে বনের পশুপাখি বৃদ্ধি পাবে।
বন বিভাগের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই জাতীয় উদ্যানটি ২০১০ সালে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যান হিসেবে স্বীকৃতি পায়। উদ্যানটি ৫১৭ দশমিক ৬১ হেক্টর জায়গাজুড়ে অবস্থিত। বনের নার্সারীতে বহেরা, হিজল, জাম, উলটকল, শাল, গর্জন, সোনালু, আমলকি, চম্পা, জারুল, চাপলিশ, ডেউয়া, বকুল, হলদু, চালতা, জাম্বুরাসহ প্রায় ৪০ প্রকার ফল গাছের চারা রয়েছে। এই বনে শাল ছাড়াও সেগুন, গামার, কড়াই, বেত, বাঁশ, জামসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ প্রজাতির গাছগাছড়া রয়েছে।
সরেজমিনে শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, বনের ভেতর সুনসান নিরবতা। সারি সারি রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। ইতোমধ্যে বনের পাখি সংরক্ষণের জন্য গাছের ডালে মাটির পাতিল বসানো হয়েছে। কোন কোন পাতিলে পাখিরা অবাসস্থল গড়ে তুলেছেন। আবার কোনো পাতিল বা হাঁড়ি থেকে পাখিরা বাচ্চা ফুটিয়ে চলে গেছে। বনের পাশেই নার্সারিতে রয়েছে বনে লাগানোর জন্য বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছের চারা।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি শেখ রাসেল জাতীয় উদ্যানের পাশেই রয়েছে আশুড়ার বিল। নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে সরকার ঘোষিত জাতীয় উদ্যানের শালবনের কোল ঘেঁষে এ বিলের অবস্থান। আশুরার বিলের আয়তন ৩১৯ হেক্টর। বিলটিতে অনেক হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির মাছ জেলেদের হাতে ধরা পড়ে। উত্তরবঙ্গের বৃহৎ এ বিলটি লম্বায় পাঁচ কিলোমিটার।
জাতীয় উদ্যানের মূল আকর্ষণ পঞ্চবটীর শালবন এবং শালবনের উত্তর পাশ ঘেষে বিশাল আশুড়ার বিল। এই বিলের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে বিচিত্র কাহিনী। কথিত আছে, এই বিলের চারপাশ থেকে ৮০টি দার বা নালা চতুর্দিকে ছড়িয়ে যাওয়ায় এর নামকরণ করা হয় আশুড়ার বিল। এ বিলের সাদা শাপলা ও লাল পদ্মফুল সমাহার উপভোগ করার মতো ছিল। বিলের পাড় থেকে স্বচ্ছ পানির ঝর্ণা বহমান ছিল। বিপুল পরিমাণ দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। কিন্তু কালের বিবর্তনে সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও একশ্রেণির দখলবাজ মহল বিলটিকে কৃষি জমি হিসেবে ব্যবহার শুরু করলে বিলটির পানি কমে যায় এবং ভরাট হয়ে বিলটি তার সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। বিলটির পানি কমে মাছের উৎপাদন ও অতিথি পাখির আনাগোনা কমে যায়।
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যানের মুনির থান ঘাট থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে ১২ লাখ টাকা ব্যয়ে ভ্রমণপিপাসুদের সুবিধার্থে শাল কাঠ দিয়ে উত্তরবঙ্গের বৃহৎ ৯০০ মিটার জেড আকৃতির দৃষ্টিনন্দন আঁকাবাঁকা কাঠের সেতু নির্মাণ করা হয় এবং নামকরণ করা হয় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব কাঠের সেতু। ভ্রমণপ্রেমীদের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাতে আশুরার বিলের ওপর দৃষ্টিনন্দন শেখ ফজিলাতুন নেছা কাঠের সেতুতে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান রক্ষা ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মো. মাহাবুর আলম জানান- আশুড়ার বিলে ক্রসড্যাম হওয়ায় ইতোমধ্যে বিলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শাপলা ও পদ্ম ফুলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেইসঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বিলে আসতে শুরু করেছে কয়েক হাজার অতিথি পাখি।
তিনি বলেন,বেশ কিছুদিন থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী আসতে শুরু করেছে এই বিলে। বনের মধ্যে বন্যপ্রাণী থাকলে আরো বেশি পর্যটক আসবে বলে দাবি করেন তিনি।
জাতীয় উদ্যানটির বিট কর্মকর্তা নিশিকান্ত মালাকার কালের কণ্ঠকে বলেন, উদ্যানটির ভেতরে পশু-পাখিদের খাবারের জন্য ইতোমধ্যে লটকন,বন কাঁঠাল, আমড়া, খুদিজাম, ডুমুর, চাপালিশসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৭০ হাজার ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। আবারো ৭৫ হাজার বিভিন্ন প্রকার ফলের গাছ রোপণ করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।