নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
রবিবার ৩৭তম বিসিএসে উর্ত্তীণদের আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদানের দিনক্ষণ ছিল। এই বিসিএসে উর্ত্তীণরা এদিন যখন যোগদানের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছিল, ঠিক তখন ক্লাসরুমেই ছিলেন এই বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডারে ৭ম স্থান অধিকার করা আসিফ ইমতিয়াজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে বিসিএসের পররাষ্ট্র ক্যাডারে জয়েন করেননি তিনি। রবিবার রাতে উচ্চ কন্ঠ অনলাইন পত্রিকার ঢাকার প্রতিনিধি কে তিনি নিশ্চিত করেন। আসিফ ইমতিয়াজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভূক্ত ম্যানেজমেন্ট ইনফরম্যাশন সিস্টেম বিভাগের প্রভাষক।
কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা ছেড়ে বিসিএসের পররাষ্ট্র ক্যাডারে জয়েন করেননি আসিফ ইমতিয়াজ। বিষয়টি নিয়ে রবিবার রাতে ফেসবুকে নিজের এ্যাকাউন্টে একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। নিচে স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘আজ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সহকারি সচিব হিসেবে আমার যোগদানের দিন ছিলো। সকালে যখন আমার ব্যাচমেটরা যোগদানের আনুষ্ঠানিকতা সারছিলো, আমি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ক্লাসরুমে আমার প্রিয় ছাত্রছাত্রীদের স্যামপ্লিং ডিস্ট্রিবিউশন পড়াচ্ছিলাম।
গত ৯ মাসে আমাকে সবাই প্রশ্ন করেছেন আমার সিদ্ধান্ত কী। কেউ বলেছেন সিভিল সার্ভিসে চলে যাও। কেউ বলেছেন যেও না। কিন্তু আমি কি করবো, তা শুধু আমিই জানতাম। একদম প্রথম দিন থেকেই জানতাম। আমার জীবনকে আমি আজ থেকে অনেক বছর পরে কোথায় দেখতে চাই, এ বিষয়ে আমার একটি পরিষ্কার ধারণা আছে।
কেন গেলাম না? এক হাত দূর থেকে কোন দেশের রাষ্ট্রপতিকে দেখার চেয়ে, কোন টাফ নেগোসিয়েশনের টেবিলে বসে কাজ করার চেয়ে শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে আমার ছাত্র-ছাত্রীদের মনোজগতে সামান্য হলেও পরিবর্তন আনতে পারাটা আমার কাছে বেশি তৃপ্তির।
প্রতিটা দিনকে নিজের মতো করে কাটানোর মধ্যে আমার শান্তি। তরুণদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং ব্যবসায়ে অনুপ্রেরণা দেয়া এবং সাহায্য করার মধ্যে রয়েছে আমার শান্তি। নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠানের হয়ে ছোটবড় কাজ করতে পারার মাঝে আমার শান্তি।
আমি বেঁচে থাকতে যেন আমার দুই জোড়া মা-বাবার এক গ্লাস পানি ঢেলে খাওয়া না লাগে- এই চিন্তাতেই আমার শান্তি। আমার উপরে ভরসা রেখে আমার স্ত্রী ভুল করেনি তা প্রমাণ করতে পারলেই আমার শান্তি। আমার যোগ্যতা থাকলে সারা পৃথিবী আমার কাছে ওপেন থাকবে, যোগ্যতা না থাকলে থাকবেনা। এতে আমার খেদ নেই। আমি যার যোগ্য, যতটুকু পাওয়ার যোগ্য, আমি তাই পাবো।
আরেকটা বড় উদ্দেশ্য আমার আছে। যারা বিসিএস দেয়না অথবা আগ্রহী না, সবার কাছ থেকে হতাশার দূর-ছাই শুনলেও আমি তাদের শোনাবো আশার গল্প। আমি তাদের শোনাবো অনুপ্রেরণার গল্প। উদ্দীপক এক আপন ভাইকে যেন ওরা আমার মাঝে খুঁজে পায়-আমি সেই আলো হতে চাই। বিসিএসের বাইরেও যে জীবন আছে, এই মন্ত্র সবার কানে পৌঁছে দিতে চাই।
মনের শান্তির চেয়ে বড় কিছুই না। আমি সব দেশে ইমিউনিটি এনজয় করলাম কিন্তু মনে শান্তি পেলাম না, এই ইমিউনিটি দিয়ে আমি কি করবো? আমি কূটনীতিবিদ/রাষ্ট্রদূত হয়ে জীবনের শেষ পর্যায়ে যেয়ে ‘আমার দেখা কূটনীতির পঞ্চাশ বছর’ বই লিখতে চাইনা।
আমি চাই জীবনের শেষ পর্যায়ে গিয়ে শ’খানেক মানুষের মুখে অন্তত এটুকু শুনতে ‘আসিফ স্যার ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে আমাদের চিন্তাজগতে একটু হলেও পরিবর্তন আনতে পেরেছিলেন’।
আমার ব্যাচমেট যারা আজকে যোগদান করেছেন, দেশের সেবা করার সুযোগ তাঁদের অনেক অনেক বেশি। আমিও যেকোন আপদে বিপদে তাঁদের জালাবো।
দেশের সরাসরি সেবা আমার ব্যাচমেট ভাইবোনেরা করুক। তাঁদের প্রতি আমার অগাধ শ্রদ্ধা আর সত্যিকারের ভালবাসা থাকলো। আমি না হয় সেবক তৈরীর চেষ্টা করি, অন্য কোন প্ল্যাটফর্মের সেবক।’