সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম

একমাত্র সচেতনতাই পারে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ঠেকাতে। ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি ব্যারিস্টার হারুন অররশিদ এ কথা বলেছেন। করোনা মোকাবেলায় ময়মনসিংহের সাধারণ জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত সচেতনতা ও সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে নিশ্চিত করলে করোনা প্রতিরোধ সম্ভব। আসুন আমরা নিজে সচেতন হই এবং অন্যদেরকে সচেতন করি। করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বব্যাপী মহামারী আকার ধারণ করেছে। সর্বশেষ পরিস্থিতি হল সারাবিশ্বে সর্বমোট প্রায় আঠার লাখ ৬৭ হাজার মানুষ প্রাণঘাতি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে এবং এক লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গিয়েছে। এটা সারা বিশ্বের জন্য বড় সংকট ও চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশে তুলনামূলক এর ভয়াবহতা এখনও অনেক কম। সোমবার পর্যন্ত ৮০৩ আক্রান্ত এবং ৩৯ জনের প্রাণহানি হয়েছে। জনবহুল এদেশে “সামাজিক দূরত্ব” বজায় রাখা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ১১০০ লোক বাস করে। ঐতিহ্যগতভাবে এখানকার লোকজনের মধ্যে নিবিড় সামাজিক বন্ধন রয়েছে। কাজেই প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষকে করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা সংক্রমণ রোধ এবং আক্রান্ত ব্যক্তির করুণ পরিণতির বিষয়ে সবাইকে সচেতন করা হচ্ছে। এ কাজে স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে করোনার বিরুদ্ধে দূর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, যাতে তারা নিজে সতর্ক হয় এবং অন্যদের সচেতন করতে পারে। প্রতিটি বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সচেতনতা ও ব্যক্তি নিরাপত্তা সম্পর্কে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক, প্রিন্ট মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পাশাপাশি পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব, সেনাবাহিনী ও সবাইকে সচেতন করছে। ময়মনসিংহ জেলায় ৬জনসহ রেঞ্জে চার জেলায় ২৮ জন আক্রান্ত হয়েছে। তাদের সবাইকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। আক্রান্তদের বাড়িসহ আশেপাশের বাড়িগুলো ইতিমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে। অন্যদের থেকে তাদেরকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে যাতে সন্দিগ্ধদের সংস্পর্শে এসে নতুনভাবে কেউ আক্রান্ত না হয়। লকডাউনে থাকা মানুষদের খাদ্য, স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সামগ্রী এবং অন্যান্য জরুরী সেবা সরবরাহ করা হচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সঠিক সময়ে যথাযথ পদপে গ্রহণে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের সংক্রমণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। তার বেশ আগে জানুয়ারী থেকে বিদেশ ফেরতদের বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং করে সন্দেহভাজন ভাইরাস বহনকারীদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। ময়মনসিংহ রেঞ্জের চারটি জেলায় তাদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩ হাজার ৬শত। তাদেরও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়। ডিআইজি আরো বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে পুলিশ নিবিরভাবে কাজ করছে। ইন্সপেক্টর জেনারেল, বাংলাদেশ পুলিশ মহোদয়ের দিক-নির্দেশনা এবং গতিশীল নেতৃত্বে আমরা ইতিমধ্যেই আরো বেশ কিছু পদপে গ্রহণ করেছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ, আক্রান্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে রাখা, তাদের সান্নিধ্যে আসা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা এবং তাদের আশেপাশের বাড়িঘর স্থানীয়ভাবে লকডাউন করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধকল্পে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা, উপজেলা পর্যায়ে অপ্রয়োজনীয় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। মহাসড়কে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, ওষুধসহ অন্যান্য জরুরী সেবা পরিবহন সচল রাখা হয়েছে। সড়ক ও মহাসড়কে চেকপোস্ট স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলা, উপজেলার প্রবেশদ্বারে পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে যাতে অন্য এলাকার লোক অনুপ্রবেশ করতে না পারে। ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়েও স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়ন এবং গ্রাম থেকে গ্রামে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, জননিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার পাশাপাশি করোনা ভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ রেঞ্জ কার্যালয় ও রেঞ্জের অন্যান্য জেলা পুলিশ নিজস্ব অর্থয়ায়ে শ্রমজীবী, গরীব, অসহায়, পঙ্গু ও দুঃস্থ ৭১৭০টি পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী (চাল, ডাল, ভোজ্য তেল, আটা, লবণ, সাবান ইত্যাদি) এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ব্যক্তিদের মধ্যে স্বাস্থ্য সুরা সামগ্রী (মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশ/হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ইত্যাদি) বিতরণ করা হয়েছে। ডিআইজি হারুন আরো বলেন, রেঞ্জ ও জেলা পুলিশের প থেকে অসহায়দের মাঝে সহায়তা কার্যক্রম লাগাতার অব্যাহত থাকবে।