বিষণ্ণতা।প্রত্যেকটি মানুষেরই এ সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনেই মেজাজগত পরিবর্তন ঘটে। কখনও আনন্দ হয় আবার কখনও মেজাজ খারাপ, হতাশা লাগে। এই পরিবর্তন খুব স্বাভাবিক। কিন্তু যখন এই মনখারাপ অবস্থা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজ ব্যাহত করে এবং অনেকদিন ধরে চলতে থাকে তখন সমস্যা হয়।

কখন আমরা বুঝবো যে আমরা বিষন্নতার স্বীকার
 
১. বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আগ্রহ ও আনন্দ প্রকাশের অভাব। আগে যা করে আনন্দ পেতাম, এখন আর পাচ্ছিনা।

২. ঘুম ও খাওয়া কমে বা বেড়ে গেছে

৩. মনোযোগ ও স্পষ্ট চিন্তার অভাব

৪. কাজে ও কথা বলতে অনীহা

৫. ভোর রাতে ঘুম ভেঙে যাওয়া আর ঘুম না আসা

৬. আত্মহত্যার চিন্তা

এসব লক্ষণ গুলো যদি ছয় মাসের বেশি থাকে এবং এর জন্য যদি দৈনন্দিন জীবনের কাজ ব্যহত হয় তখন বুঝতে হবে যে আমি বিষন্ন।

সুখের খবর হলো আমরা যদি একটু সক্রিয় ও সচেষ্ট হই তাহলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারি।

১) আমাদের খাওয়া, ঘুম ও ব্যয়াম এই তিনটি জিনিসকে ঠিক রাখতে হবে। তাহলে আমরা এর মধ্যে ঢুকবো না বা ঢুকলেও বেরিয়ে আসার সাহস পাব।

২) বিষন্নতার মধ্যে কিছুই ভালো লাগে না। কিছুটা জোর করেই আগে যা যা ভালো লাগতো তার একটি তালিকা তৈরী করতে হবে।

৩) তালিকায় যেটা সবচেয়ে ওপরে, সেই কাজটি দিনের অনন্ত কিছুটা সময় জোর করে করতে হবে। এই সময় বাড়ির লোকের সাহায্য খুব দরকার হয়। এই ভাবে ধীরে ধীরে তালিকা অনুযায়ী নামতে হবে।

৪) গান ভালো থাকার খুব সুন্দর উপায়। তবে বিরহের গান নয়। এটি অবশ্যই ব্যক্তি বিশেষে বিভিন্ন হবে।

একটু ও যদি উন্নতি হয়, আমরা একটু জীবনীশক্তি খুঁজে পাব যে, আমি ও পারি।

৫) চিন্তা ধারার মধ্যে একটু নেড়ে চেড়ে দেখতে হবে যে কোথায় সমস্যা হচ্ছে। কাছের বিশ্বস্ত লোকের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। দেখতে হবে নিজের চাহিদা ও অন্যের কাছে আশা করাটা অত্যধিক বেশি নয় তো?

৬) আর একটা মজার কথা হলো আমরা ব্রেন কে যা শেখাবো সে সেই মতো কাজ করবে। এই সময় আমাদের মধ্যে ‘নেতিবাচক স্বয়ংক্রিয় চিন্তা (নেগেটিভ অটোমেটিক থট) ক্রমাগত আসতে থাকে। যাকে আমরা মনোবিজ্ঞানের ভাষায় বলি ন্যাট (এনএটি)। আমরা যদি এই নেগেটিভ অটোমেটিক থট কে উল্টে দিয়ে পজেটিভ বানিয়ে দিই এবং তার পেছনে যুক্তি খোঁজার চেষ্টা করি তাহলে সেটি খুব ভালো কাজ করে। এটি প্রথম প্রথম কিছুটা জোর করে করতে হবে।

একটা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটা বোঝা যেতে পারে আমার যদি মনে হয় যে আমাকে কেউ ভালবাসে না সেটাকে উল্টে দিয়ে আমি ভাবতে পারি যে আমাকে আমার হাজব্যান্ড ভালোবাসে কারণ সে রোজ সকালে আমার জন্য চা তৈরি করে দেয়। এইভাবে আমি নেগেটিভ চিন্তা টাকে উল্টে পজিটিভ বানিয়ে তার পেছনে একটি যুক্তি লাগিয়ে দিতে পারি। আমার মধ্যে যা কিছু নেগেটিভ চিন্তা আসছে সবকটাকে এভাবে বিপরীত করে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে শুরু করলে ব্রেনও সেই মতো চলবে।

৭) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিষন্নতার কারণকে এড়িয়ে না গিয়ে তার মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে।