জিল্লুর রহমান, নওগাঁ প্রতিনিধি

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে নওগাঁয় আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত বুধবার দিবাগত রাত থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত জেলার উপর দিয়ে আম্ফানের প্রভাবে ব্যাপক ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। এতে জেলার সীমান্তবর্তী সাপাহার ও পোরশা উপজেলার আমচাষিরা ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি আম উৎপাদন হয় জেলার পোরশা ও সাপাহার উপজেলায়।

নওগাঁর বদলগাছী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার অফিস সূত্রে জানা যায়, বুধবার (২০ মে) রাত ১২টার পর নওগাঁয় আঘাত হানে। এ সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭০-৮০ কিলোমিটার।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টিপাত হয়েছে। কখনও দমকা হাওয়ায় রুপ নিয়ে বাতাসের গতিবেগ বেড়ে গিয়েছে। ঝড়ের তাণ্ডবে বেশ কিছু গাছের ডালপালা ভেঙে ও গাছের আম ঝরে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের তোড়ে সাপাহার ও পোরশায় বাগানে বাগানে প্রচুর আম ঝরে পড়ায় ভোর হতে প্রতিটি বাগানে সাধারণ মানুষের আম কুড়ানোর ধুম পড়ে।

সাপাহার উপজেলার আমচাষি মুমিনুল হক, দেলোয়ার হোসেন ও পোরশা উপজেলার আমচাষি জিয়ারুল ইসলাম, রমজান আলী ও আনিসুর রহমান বলেন, প্রায় ১৫ দিন পূর্বে কালবৈশাখীর তাণ্ডবে আমাদের এলাকায় আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল। সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আক্রমণ।

বাগানের অসংখ্য ল্যাংড়া ও ফজলি আম ঝরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে আম্রপালী আমের গাছগুলো আকারে ছোট হওয়ায় গাছের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি।তবে অনেক আম ঝরে গেছে। বেশ কিছু গাছ ঝড়ে পড়ে গেছে। এতে করে বাগানে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। ঝরে পড়া আম ৩-৪ টাকা কেজির বেশি বিক্রি হবে না। যেসব আম ফেটে গেছে, সেগুলো কেউ কিনবে না। এ আম পরিপক্ক হওয়া পর্যন্ত আবহাওয়া আমচাষিদের অনুকুলে থাকলে এই ৪০ ভাগ আমই চাষিদের ভাগ্য ফেরাতে পারে বলে আমচাষিদের বিশ্বাস।

তারা আরও বলেন, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে আতঙ্কিত আমচাষিরা তাদের বাগানের আম নিয়ে আতঙ্কিত হলেও প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমের ক্ষতি যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ে পরিণত হয়েছে। তবে বৈশ্বিক করোনার করণে যদি আমের বাজার মন্দা হয় তা হলে আমচাষিরা আবার ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে তারা শঙ্কিত।
পোরশা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজ আলম বলেন, এবার উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৭ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু অনেক বাগানে মুকুল না থাকায় এবং বিভিন্ন দুর্যোগে আম ঝরে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতি হেক্টর ১০মেট্রিক টন। তবে ঝড়ে উপজেলায় গড়ে ৫ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে।

সাপাহার উপজেলার উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, সাপাহারে এবার ৮ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এমনিতেই এবার বাগানগুলোতে আম কম ধরেছিল। তারপরও এই ঝড়ে অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব এখনও নিরূপণ করা যায়নি, তবে কিছু বাগান পরিদর্শন করে ধারণা হচ্ছে আম গাছের প্রায় ৪০-৫০ শতাংশ আম পড়ে গেছে।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে আমচাষিদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে।