► শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত

► লক্ষ্য ইসি ও সরকারের মুখোশ উন্মোচন

একাদশ জাতীয় সংসদের শূন্য হওয়া পাঁচটি আসনের মধ্যে একটি আসনের উপনির্বাচনে এরই মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। বাকি চারটি আসনের উপনির্বাচনেও অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। বিএনপি নেতারা বলছেন, দলের প্রার্থীরা নির্বাচন করলে খালি মাঠে গোল দিতে পারবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের একটু হলেও কসরত করতে হবে। এ জন্য তারা নির্বাচন কমিশন (ইসি) ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ব্যবহার করতে পারে। তখন রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সংস্থার অনিয়ম আবারও জনগণের সামনে উন্মোচিত হবে।

বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনের দিন শেষ পর্যন্ত দলের প্রার্থীরা মাঠে থাকবেন।

গত শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী শনিবার চার আসনের উপনির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হতে পারে। প্রার্থী ঘোষণাও করতে পারে ওই দিন রাতেই।

যে চারটি আসনে উপনির্বাচন আসন্ন সেগুলো হলো ঢাকা-৫, ঢাকা-১৮, সিরাজগঞ্জ-১ ও নওগাঁ-৬। এর মধ্যে ঢাকা-৫ ও নওগাঁ-৬ আসনের উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১৭ অক্টোবর। বাকি দুই আসনের উপনির্বাচনের তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি।

আরেক শূন্য আসন পাবনা-৪-এর উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর। এ আসনে উপনির্বাচনের জন্য এর মধ্যে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে আমাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ধীরে চলছে। পরিবেশ স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীরাও আবার মাঠের রাজনীতিতে ফিরবেন। দল ও নেতাকর্মীদের সবদিক বিবেচনায় নিয়েই অনেক সময় সিদ্ধান্ত নিতে হয়।’

দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিনা চ্যালেঞ্জে কোনো নির্বাচনই আমরা ছেড়ে দিতে চাই না। আমরা জানি, রেজাল্ট কী হবে। তার পরও নির্বাচনে থাকতে চাই। কারণ অনেকগুলো। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে—এই সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ বারবার উন্মোচন করতে চাই। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় নেতাকর্মীরা এলাকায় স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন না। নির্বাচন উপলক্ষে তাঁরা কিছুটা হলেও এসব কর্মকাণ্ড স্বাভাবিকভাবে চালাতে পারেন।’

গত ৬ মে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা এবং ১০ জুলাই ঢাকা-১৮ আসনের সংসদ সদস্য সাহারা খাতুন মারা যান।

বিএনপি বলছে, এই দুটি আসন বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে না দেওয়ার কারণ হলো দেশের নানা প্রান্তে জোর করে নির্বাচনের ফল ছিনিয়ে নিলেও রাজধানীতে সেটি কঠিন। কেননা সংবাদ মাধ্যম, বিদেশি পর্যবেক্ষকরা এখানে সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকেন। এ ছাড়া রাজধানীর ভোটারদের সচেতনতাও বেশি। ফলে সরকার, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনিয়ম করলেও সেটি বেশি করে প্রচার হওয়ার ফলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এদের সম্পর্কে নেতিবাচক বার্তা যায়। বিএনপি যদি ভোটে অংশ না নেয় তাহলে এই বার্তা পৌঁছানোর সুযোগ থাকে না। তাই দলটি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত ২ এপ্রিল পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ মারা যান। সেখানকার উপনির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিবকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি।

জানা গেছে, উপনির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়ে দলের একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী নিজেদের মতো মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চান সালাহউদ্দিন আহমেদ (একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৪ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী)। এই আসনে তখন দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন নবী উল্লাহ নবী। তিনিও উপনির্বাচনে প্রার্থী হতে চান। এ ছাড়া আছেন মহানগরের নেতা কাজী আবুল বাশারও।

গত ২৭ জুলাই নওগাঁ-৬ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম মারা যান। শূন্য এ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন নিয়ে আপন দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিগত বিএনপি সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির ও তাঁর ভাই দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু প্রার্থী হতে চান। একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী ছিলেন আলমগীর কবির।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুন মারা যাওয়ার পর যথাক্রমে সিরাজগঞ্জ-১ ও ঢাকা-১৮ আসন দুটিও শূন্য হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ-১ আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে ভোটে লড়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা। উপনির্বাচনে তিনি ছাড়াও আরো তিনজন ধানের শীষের মনোনয়ন চান। তাঁরা হলেন—নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, সেলিম রেজা ও টি এম তাহজিবুল এনাম।

ঢাকা-১৮ আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন, উত্তর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহমেদ, ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মো. বাহাউদ্দিন সাদী নিয়মিত বিভিন্ন মাধ্যমে গণসংযোগ করছেন।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, আগামীকাল মঙ্গলবার, পরশু বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এরপর শনিবার রাতেই দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। উল্লেখ্য, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরাই পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য।

উপনির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বিএনপি জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হামলা-মামলার পরও আমরা নির্বাচনে থাকছি। আমাদের প্রার্থীরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে।’ এদিকে গতকাল রবিবার রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। সদস্য হিসেবে রয়েছেন শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাজমুল হক নান্নু, শাহীন শওকত, এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম, সেলিম রেজা হাবিব, সিরাজুল ইসলাম সর্দার, হাবিবুর রহমান তোতা ও হাসান জাফির তুহিন।