চীনের সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের নির্যাতনের প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বিশ্বের ৩৯টি দেশের মানবাধিকার কর্মীরা।

গত মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) জাতিসংঘে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ৩৯টি দেশ জার্মান দূত ক্রিস্টোফ হোয়াইজেনের নেতৃত্বে চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনে নিন্দা জানায়।

জাতিসংঘে নিযুক্ত জার্মান দূত ক্রিস্টোফ বলেন, ‘মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে আমরা চীনের আহ্বান জানাই। বিশেষত জিংজিয়ান ও তিব্বতের ধর্মীয় জনগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু উপজাতিদের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানাই।’

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় একটি প্রদেশ জিংজিয়ান। সম্প্রতি এখানকার এক মিলিয়নের বেশি উইঘুর মুসলিমদের ‘পুনরায় শিক্ষা’ দেওয়ার নামে চীন সরকার একটি ক্যাম্পে আটক করে রাখে। সেখানের অধিবাসীদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সহিংসতা বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার কর্মীরা।

ক্রিস্টোফ হোয়াইজেন জানান, ‘সেখানে ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতায় অনেক বিপত্তি। তাছাড়া আন্দোলন, মতপ্রকাশ ও উইঘুর সংস্কৃতি নিয়ে আছে অনেক বাধা। উইঘুর ও অন্যান্য নৃগোষ্ঠীদের ওপর কড়া নজরদারি আরোপ করা হয়। তাছাড়া সবাইকে কাজ করতে ও জম্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা হয়।’ বৈঠক শেষ করে হোয়াইজেন চীনকে বন্দী শিবির বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।

হোয়াইজেন আরো জনান, গত বছরও উইঘুরদের বিষয়ে চীনের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানায় বিশ্বের ২৩টি দেশ। সংখ্যালঘুদের প্রতি বেইজিংয়ের নীতি উদ্বেগজনক হওয়ায় এ বছর আরো দিগুণ দেশ নিন্দা জানায়।

এদিকে ব্রিটিশ কর্মকর্তা জোনাথান অ্যালেনের সঙ্গে হোয়াইজ দাবী জানান, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলটকে উইঘুরদের অবস্থা জানতে জিংজিয়ান পরিদর্শনের অনুমোদন দিতে হবে।

গত ৩০ জুন চীনের বিতর্কিত আইন বাস্তবায়নের প্রতিবাদ জানিয়ে অ্যালেন বলেন, ‘আইনটি হংকংয়ের স্বায়ত্তশাসনকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং অধিকার ও স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।’ আইনটি প্রয়োগের ফলে হংকংয়ের মাসব্যাপী সরকার বিরোধী আন্দোলন বন্ধ করে দেয়।

এদিকে জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের স্থায়ী দূত জাং জুন অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে যুক্তরাষ্ট্রকে আঘাত করেন। উইঘুর ইস্যুর কোনো সমাধান উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘চীনের মানবাধিকার বিশ্বব্যাপী সমাদৃতি অর্জন করেছে। আয়নায় নিজের মুখ ভালোকরে দেখা উচিত ওয়াশিংটনের। অন্য দেশকে আঘাত করার আগে নিজের সমাজে বর্ণ বৈষম্য দূর করা উচিত।’

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, ৩৯টি দেশের বিবৃতি উইঘুর, তিব্বত ও হংকংয়ের সঙ্গে চীনের বর্বরোচিত আচরণের প্রতি পীড়াদায়ক তিরস্কারের মতো। মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা অর্জনের জন্য তীব্র বাঁধার সম্মুখীন হচ্ছে চীনের অনেক সাধারণ জনগন।

জাতিসংঘ পরিচালক লুইস কার্বোনিউ বলেন, চীন বিরোধী ক্রমবর্ধমান প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে চীনের মানবাধিকার বিষয়ে প্রতিবেদ তৈরির জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন গঠন করা জরুরি।

সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা