শহিদুল ইসলাম শহিদ, নওগাঁ, মান্দা প্রতিনিধি

শামসুর রহমানের নিজস্ব কোন জমিজমা নেই বলে তিনি জানান। তিনি অন্যের জমিজমা ইজারা নিয়ে পেয়ারা চাষ করেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে শিক্ষিত বেকার লোকের সংখ্যা অগণিত। তাই সকলের চাকরির পিছনে হন্যে হয়ে ঘুরছে চাকরি পাওয়ার জন্য। চাকরির পেছনে হন্য হয়ে না ঘুরার চাইতে যদি কোন ব্যক্তি নিজস্ব উদ্যোগে উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করে ,তাহলে সফলতা আনা সম্ভব বলে মনে করি। মান্দা উপজেলার ৫ নম্বর গনেশপুর ইউনিয়নের সতিহাট বাজারের পূর্ব পার্শ্বে এই উদ্যোক্তা তার বাগানে থাই পেয়ারা চাষ করে সফল হয়েছেন।তিনি বর্তমানে প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ বিঘা জমিতে এই সুস্বাদু ও মিষ্টি থাই পেয়ারা চাষ করেন । এখান থেকে প্রায় প্রতিদিন ৪০থেকে ৫০ মণ পেয়ারা বিক্রি করা সম্ভব হয়। এখান থেকে পেয়ারা নওগাঁ জেলা সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়। তিনি মান্দা উপজেলার গনেশ পুর ইউনিয়নের একজন আদর্শ কৃষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি ২০১১ সালে বগুড়া আজিজুল হক সরকারি কলেজ থেকে বাংলা বিভাগে পড়াশোনা শেষ করেন। পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি সতিহাট স্কুল এন্ড কলেজ এ বাংলা বিভাগে শিক্ষকতা করেন। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি কৃষির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং কৃষিকাজকে তিনি মনেপ্রাণে ভালবাসতেন। তিনি কৃষিকাজে নিজের মন প্রাণ উজাড় করে দিয়ে পরিশ্রম করতেন। তিনি কৃষি কাজ করতে অনেক আগ্রহী ছিলেন ছাত্র জীবন থেকেই। তার এই আগ্রহী পরবর্তীকালে অর্থাৎ বর্তমানে আদর্শ কৃষক হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে সহায়তা করে। ছাত্রজীবনে তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি সর্বপ্রথম ২০০২ সালে কৃষি কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেন। ২০০২ সালে সর্বপ্রথম’ সবরি কলা’ চাষ আবাদ শুরু করেন। তারপর তিনি সাগর কলা ও চিনি চম্পা কলা চাষ করেন। এই কলা
চাষে তিনি ভালো অর্থ উপার্জন করতে পারলেও এক পর্যায়ে কলা চাষের সময় হঠাৎ কলা গাছ ব্যাধি ধরে মারা যেতে শুরু করায় তার কলা চাষে লোকসান হতে শুরু হয়। কলাতে লোকসান এরপর গত ৫ বছর আগে তিনি ১০ বিঘা জমি চাষ ইজারা নেন। এই ইজারা জমিতে তিনি থাই পেয়ারার চাষ শুরু করেন। এ পেয়ারা চাষ লাভজনক হওয়ায় তিনি আস্তে আস্তে ইজারা জমির পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে লাগলেন। এখন প্রায় ৫০থেকে ৫৫ বিঘা জমিতে থাই পেয়ারা চাষ করেন। বর্তমানে সে থাই পেয়ারা থেকে ভালো মুনাফা অর্জন করছেন বলে জানান। তার এই পেয়ারা বাগানে সহযোগিতা করছেন তার স্ত্রী নূরী জান্নাত নেসা। তারা প্রতি বিঘা জমিতে ২০০ থেকে২৫০টি চারা রোপণ করেন নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। তারা চারা গাছ মাটিতে লেগে গেলে জৈব সার সহ বিভিন্ন রকম ভাবে তার পরিচর্যা করে।নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী, বগুড়া সহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পেয়ারার চারা সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি চারা ক্রয় করে ২০ থেকে ৩০টাকা পর্যন্ত। চারা লাগানোর ছয় মাসের মধ্যে গাছে ফল আসা শুরু করে। শামসুর রহমান আরও বলেন, আমার প্রতিদিনের জন্য বাগানে ২০ থেকে ২৫ জন লোক কাজ করে, তাদের মধ্যে কাউকে মাসিক আবার কাউকে প্রতিদিনের মজুরি প্রতিদিন দিতে হয়।মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার রাকিবুল হাসান বলেন,যদি কোন ব্যক্তি নিজস্ব উদ্যোগে উদ্যোক্তা হতে চান তাহলে সে অবশ্যই সফল হবেন। তাই শিক্ষিত বেকার ব্যক্তিরা চাকরির পিছনে হন্যে হয়ে না ঘুরে একজন সফল উদ্দোক্তা হয়ে কিছু করতে পারেন। তাহলে জীবনকে একজন উদ্যোক্তা স্বনির্ভর করে তুলতে পারবেন। তিনি আরো বলেন, সফল কৃষক শামসুর রহমান অনেক সময় আমাদের কৃষি অফিসে ফোন দিয়ে অনেক পরামর্শ নিয়েছেন কিভাবে কি করতে হবে।