সোহেল রানা মালয়েশিয়া প্রতিনিধি।
অবৈধ শ্রমিকদের বৈধকরণে সুখবর দিল মালয়েশিয়া বিদেশি শ্রমিকদের অস্থায়ী ভিসা দেয়ার কথা ভাবছে মালয়েশিয়া সরকার। দেশটিতে অবস্থানরত অবৈধ শ্রমিকদের নিয়ে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তা মোকাবিলায় এ সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে দেশটি। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) মালয়েশিয়ার জাতীয় দৈনিক মালয়ে মেইল প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানায়। মুহিউদ্দিন ইয়াসিন বলেন, ‘এতে করে মালয়েশিয়ার রাবার ও পাম ওয়েল শিল্পে শ্রমিক সংকট দূরকরাও সহজ হবে।‘ বিশেষ করে দেশটিতে করোনাভাইরাসের প্রকোপের কারণে সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাবার ও পাম অয়েল শিল্পে ব্যপক শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। তাই দেশটির জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এই দুই খাতের সমস্যা সমাধানে বিশেষ নজর দিয়েছে ইয়াসিন সরকার। অবৈধ শ্রমিকদের জন্য এ ভিসার মেয়াদ এক থেকে দুই বছর করার প্রস্তাবনা প্রথমে দেয়া হয়েছিল। শুক্রবার চায়না শ্রমিকদের একটি সংগঠন এবং চীনের একটি বেসরকারি এনজিওর সঙ্গে বৈঠকের সময় এসব বিষয় আলোচনা করেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। ‘তাদের একটি অস্থায়ী লাইসেন্স অথবা কাজের অনুমতিপত্র দেয়া হবে। এটিকে আমরা সাধারণ ক্ষমা বা তাদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করার আইনি বৈধতা দেয়া মনে করি। এতে করে আমরা এ খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারব।’ বলেন ইয়ানিস। এর আগে দেশটির সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে ইয়ানিস বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে যে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে মূলত তা দূর করতে বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। দ্রুতই এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হবে।’ এ পদক্ষেপকে তার সেই বক্তব্যের পতিফলন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মহিউদ্দিন বলেন, ‘আগামীতে এমন সিন্ডিকেট গুলোকে কোনো সুযোগ দেয়া হবে না যারা অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়ে আসে। কারণ মালয়েশিয়ার জনগণ শান্তশিষ্ঠ এবং শান্তিপ্রিয়।’ তিনি বিদেশি শ্রমিকদের সতর্ক করে বলেন, ‘আপনি এখানে এসে এক বছর থাকবেন। অবৈধভাবে কাজ করবেন। তারপর সরকার আপনাকে বৈধ হওয়ার সুযোগ দেবে এমনটা আশা করা ভুল হবে।’ ‘এখন যে সুযোগ দেয়া হচ্ছে এটি শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট শ্রমিক সংকট দূর করার জন্য। কারণ অবৈধ শ্রমিকদের কারণে মালয়েশিয়ার স্থানীয় জনগণ নানা সমস্যায় পড়তে হয়। আমরা এসব সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। অসম্ভব এমনটা আর হতে দেওয়া হবে না।’ বলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। উল্লেখ, কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা গত ৩ জুলাই ‘লকড আপ ইন মালয়েশিয়াস লকডাউন’ নামে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করে। প্রায় ২৬ মিনিটের ঐ ডকুমেন্টারিতে মালয়েশিয়ায় আটকে পড়া অবৈধ শ্রমিকদের বেহাল দশার কথা তুলে ধরা হয়। সেখানে দেখা যায়, দেশটিতে অবৈধ শ্রমিকদের দুরাবস্থার নানা দিক। ওই তথ্যচিত্রে সাক্ষাতকার দিয়ে মালয়েশিয়ার সরকারের রোষাণলে পড়েন বাংলাদেশি শ্রমিক রায়হান কবির। যদিও রায়হান কবিরের দেয়া বক্তব্যে দেশটির সরকার কোনো রকম অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। শ্রমিক হিসেবেও রায়হানের বৈধতা ছিল। ঐ ডকুমেন্টারিতে বলা হয়, মহামারির মধ্যে মালয়েশিয়ার কর্তৃপক্ষ দু’হাজারেরও বেশি অনিবন্ধিত শ্রমিককে আটক করেছে এবং কঠোর ভাইরাস লকডাউনের মধ্যে তাদের আটকে রাখা হয়েছে। সেখানে শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং তাদের পর্যাপ্ত খাবার দেয়া হচ্ছে না। অভিযোগ ছিল নির্যাতনেরও।