‘মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয় বলে মন্তব্য করেছেন নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে ইসলামি দলগুলোর বিরোধিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে পর্যালোচনা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করা হবে।
দায়িত্ব পাওয়ার পর রবিবার প্রথম অফিসে এসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান। সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এ মতবিনিময় সভা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে ইসলামি দলগুলোর বাধা দেয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু না কিছু লোক কিছু না কিছু সময় শুধু বাংলাদেশে না সারা বিশ্বের দরবারে বিভিন্ন সময় কিছু না কিছু অঘটন ঘটায়, যখন কোনো সমস্যার দৃষ্টি হয় তখন তা সমাধান করারও ব্যবস্থা হয়।
তিনি বলেন, আমি এ বিষয়গুলো চিন্তা করব, ভাববো ও পরামর্শ করব- কীভাবে এটা করলে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। সার্বিক দিক থেকে এ সব আর যেন পরবর্তীতে কেউ না করতে পারে, করার সুযোগ না পায়। সেগুলো আমাদের চিন্তায় রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অবশ্যই আমি চেষ্টা করব। সবার কাছে আন্তরিক সহযোগিতা চাই।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী বলেন, মূর্তি ও ভাস্কর্য কিন্তু এক নয়, আজকে পাকিস্তান যান, ভারতে যান। বিশ্বের যে কোনো রাষ্ট্রে যান না কেন- সব জায়গায় ভাস্কর্য আছে। ভাস্কর্যই যদি মূর্তি হয় তবে টাকার ভেতরে বঙ্গবন্ধুর ছবি আছে। এর আগে যারা ছিলেন তাদের ছবি ছিল। সেগুলো কীভাবে থাকল। সেগুলো সবাই পকেটে নিয়ে ঘোরে, কয়েনের মধ্যেও আছে। সারাবিশ্বে সব জায়গায় যান, কয়েনের ভেতরে সবকিছু আছে।
তিনি বলেন, এগুলো হলো আমাদের নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি। আজকে যদি বিশ্বের সব জায়গায় চলে, ইসলামিক কান্ট্রিগুলোর কথা, আমি মিসরে গিয়েছি সেখানে দেখেছি, সৌদি আরবে যান সেখানেও আছে। সেটা যদি হয়, আজকে বাংলাদেশে যারা এটা নিয়ে আলোচনা করছে তাদের চিন্তা করতে হবে, মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়। এই জিনিসটা যখন আপনারা আমরা বুঝাতে সক্ষম হবো, তখন সবকিছুতে একটা সমাধান পেয়ে যাব বলে আমার বিশ্বাস।
যারা বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করছে তাদের জন্য আপনার কী মেসেজ- এ বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমি কথাটি পরিষ্কার করেই বলেছি কিন্তু। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি বসব, চিন্তা করব। পরে কী করা যায়, এর একটি চিন্তা আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে আসবে, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার বক্তব্য দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আপনারা একটু ধৈর্য ধরুন, আমরা অবশ্যই এগুলোর সমাধানের জন্য যে কাজ করা প্রয়োজন সেটা আলোচনা সাপেক্ষে করব ইনশাআল্লাহ। আমরা প্রত্যেকটি জিনিসকে অত্যন্ত সূ²ভাবে নিজেদের বিবেক দিয়ে বিবেচনা করে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে কাজ করব ইনশাআল্লাহ।
ধর্ম মন্ত্রণালয়কে আরও গতিশীল করার প্রত্যাশা
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন নতুন দায়িত্ব পাওয়া প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নৈতিকতাভিত্তিক অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাব ইনশাআল্লাহ। প্রধানমন্ত্রীর সঠিক নির্দেশনার আলোকে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে হজ ব্যবস্থাপনার যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন, সারাদেশে মডেল মসজিদ নির্মাণ, মঠ-মন্দির, প্যাগোডা সংস্কার ও উন্নয়ন, মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডাভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ফরিদুল হক খান বলেন, আগামী দিনে আপনাদের সকলের সহযোগিতায় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে চাই। এক্ষেত্রে আমি আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা পাব বলে বিশ্বাস করি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সামাজিক ও মানবিক অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিপূর্ণ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জাতির পিতার অসম্পূর্ণ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমি সর্বোচ্চ আন্তরিকতা, সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেক্ষেত্রে আপনাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতা চাই। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সকলে মিলে সততা, নিষ্ঠা ও দেশপ্রেম নিয়ে কাজ করলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
এ সময় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নূরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
গত ২৪ নভেম্বর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেয়ার পর জামালপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. ফরিদুল হককে ২৫ নভেম্বর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।