স্বপ্নের দূরত্ব মাত্র ১৫০ মিটার। ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের উপর শেষ স্প্যানটি বসলেই স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দেখা পাবে বাংলাদেশ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্ত এক সুতোয় গেঁথে দৃষ্টি সীমায় পূর্ণ রূপে ভেসে উঠবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো।
এ পর্যন্ত পদ্মা সেতুর ৪০টি স্প্যান বসানো হয়েছে। বাকি আছে সর্বশেষ স্প্যান। ৪১তম স্প্যান (২-এফ) বসবে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিয়ারের ওপর। বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) স্প্যানটি বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। তবে, স্প্যান বসানোর কার্যক্রম শুরু হবে আজ থেকেই।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের মাওয়ার কুমারভোগ কন্সট্রাকশন ইয়ার্ডের স্টিল ট্রাস জেটি থেকে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ধূসর রঙের স্প্যানটি বুধবার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভাসমান ক্রেন তিয়ান-ই-তে করে কাঙ্ক্ষিত পিয়ারের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে। এ খবর নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের।
তিনি জানান, নানামুখী চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে সবগুলো স্প্যান বসানো শেষ হতে যাচ্ছে। এ উপলক্ষ্যে বিশেষ কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। তবে, চীনা ঠিকাদার কম্পানি নিজেদের নিয়মে ছোট একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পদ্মা সেতু। সেই হিসেবে ৩ বছর ২ মাস ১০ দিনে বসানো হচ্ছে সেতুর সব কয়টি স্প্যান। বন্যা, নদী ভাঙন, চ্যানেলে নাব্যসংকট, করোনা ভাইরাস মহামারিসহ নানা জটিলতা কাটিয়ে একে একে ৪০টি স্প্যান বসানো হয়। গত ৪ ডিসেম্বর বসে ৪০তম স্প্যান।
মূল সেতুর ২ হাজার ৯১৭টি রোডওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ২৮৫টি এবং ২ হাজার ৯৫৯টি রেলওয়ে স্ল্যাবের মধ্যে এক হাজার ৯৩০টি স্থাপন করা হয়েছে। মাওয়া ও জাজিরা ভায়াডাক্টে ৪৮৪টি সুপার-টি গার্ডারের মধ্যে ৩১০টি স্থাপন করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট এক প্রকৌশলী জানান, সেতুর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল পিলার ও স্প্যান বসানোর কাজ। এ দুটি কাজের সিংহভাগই নদীর ভেতরে করতে হয়। স্রোত, কুয়াশা, বন্যা এ কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে আসছে। শেষ স্প্যানটি বসলে বাকি কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নেয়া সম্ভব হবে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলীর সরবরাহ করা সর্বশেষ তথ্যে জানা যায়, মূল সেতুর বাস্তব কাজের অগ্রগিত ৯১ শতাংশ, নদীশাসনকাজের ৭৫.৫০ শতাংশ, সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার কাজের শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮২.৫০ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বরে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে পদ্মা সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার।
প্রকল্প ব্যবস্থাপক দেওয়ান আবদুল কাদের উচ্চকণ্ঠকে বলেন, সার্বিকভাবে সেতুতে যান চলাচল শুরু করতে পারবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে।