চুনারুঘাট প্রতিনিধিঃ

হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে জলাশয়ে বাধ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই ছান্দের হাজারো মানুষজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
উভয় পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে ঘন্টা খানেক পর অন্য একটি ছান্দের লুকজন পক্ষ নিয়ে দু’ছান্দবাসী একত্রিত হয়ে এক ছান্দের লুকজনের উপর চড়াও হয় এবং শুরু চুতুর্দিকে আক্রমন। এই সংঘর্ষে তখন এক ভয়াবহ রুপ আকার ধারন করে এবং মানুষের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়।
পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ত্নন আনতে টিয়ারশেল,রাবার বুলেট ও শর্টগানের ফাঁকা গুলি ছুড়ে।


সংঘর্ষে একটি মোটরসাইকেল পুড়ানো ও দুটি মোটরসাইকেল ভেঙ্গে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে আহতদের সাথে যাওয়া হাসপাতালে ও সংঘর্ষ এলাকা থেকে ৫জন’কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পরে গ্রেফতারকৃতদের ৫৪ধারায় আদালতের মাধ্যমে হবিগঞ্জ কারাগারে প্রেরন করা হয়েছে।
তবে এঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে থানা সূত্র জানান।


বানিয়াচং উপজেলার ১ নং উত্তর-পূর্ব ইউনিয়নের কামালখানী গ্রাম ও মজলিশপুর গ্রামের সীমান্তে জলাশয়ে বাধ দেওয়ার বিরোধকে কেন্দ্র করে আজকের এই সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।
১৮ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ১১টা ৪০মিনিট থেকে শুরু হয় সংঘর্ষটি এবং আস্তে আস্তে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে বানিয়াচং থানার অফিসার ইনচার্জ এমরান হুসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হয়ে একদিকে অবস্হান নেন সবাই।
এর কিছুক্ষণ পর ১২টা ২৫মিনিটের দিকে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ রানা একটি হ্যান্ডমাইক নিয়ে হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে সংঘর্ষ সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালান।
কিন্তু কে শুনে কার কথা সংঘর্ষ আস্তে আস্তে আরও ভয়াবহ রুপ নেয়।


১২টা ৪০মিনিটের দিকে কয়েক রাউন্ড টিয়ারগ্যাস,রাবার বুলেট ও শর্টগানের ফাঁকা গুলিও ছুড়ে পুলিশ।
এছাড়াও এই সংঘর্ষের সংবাদ পেয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা কর্মীগনদের সংঘর্ষ সামাল দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি ছিল লক্ষনীয়।
উভয় পক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে কামালখানী ছান্দবাসীর পক্ষে অবস্হান নেন ১২মহল্লার ছান্দের একটি অংশ সৈদরটুলা ছান্দের লুকজন।
তারাও দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে কামালখানী ছান্দের লুকজনের সাথে দুই ছান্দের লুকজন একত্রিত হয়ে ১২টা ৫৫মিনিটের দিকে মজলিশপুর ছান্দের উপর আক্রমন চালান।শুরু পুরু হাওর জোরে সংঘর্ষ এমনকি বিভিন্ন বাড়ি এলাকায়ও চলে এই সংঘর্ষের তান্ডবলীলা।
সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে মজলিশপুড় গ্রামের রোমন মিয়ার একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে ফেলার ঘটনা ঘটে।এছাড়াও ঐ গ্রামের বড়বাজারের কাপড় ব্যাবসায়ী মুস্তাক মিয়ার একটি মোটরসাইকেল ও বড়বাজারের ডেকোরেটার্স ব্যাবসায়ী মুতি মিয়ার একটি মোটরসাইকেল ভেঙ্গে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।
এক পর্যায়ে কামালখানী ও সৈদরটুলা গ্রামবাসী মজলিশপুড় ছান্দের গ্রামবাসীকে দৌড়াইয়া নূরপুর নামকস্হানে পিছু হটিয়ে দিয়ে আসে।
এদিকে দেড়টার দিকে হবিগঞ্জ থেকে আরও অতিরিক্ত পুলিশ এসে সংঘর্ষস্হলে পৌঁছে যোগদেন।
পরে সংঘর্ষের খবরটি হাওর থেকে চলে যায় এলাকায়।
সরজমিনে ১টা ৫০মিনিটে গিয়ে দেখা যায় আদর্শবাজার এলাকার পূর্বদিকে অবস্থান নিচ্ছেন সৈদরটুলা ও কামালখানী ছান্দের লুকজন।
তারা সংবাদ পেয়েছেন মজলিশপুড় গ্রামের লুকজন কামালখানী গ্রামের লুকজনের উপর হামলা চালিয়েছেন।
তারা এমন সংবাদে অবস্থান নেওয়ার কথাও অনেকেই জানান।
পরে ২টার দিকে মজলিশপুড় গ্রামের ভিতরে এসে দেখাযায়,তারাও তাদের ফুটবল খেলার মাঠে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অবস্হান নিচ্ছেন।
তারা জানান,কামালখানীর লুকজন মসজিদে মাইকিং করে লুকজনকে আসতে বলেছেন এমনকি মজলিসপুড় গ্রামবাসী নাকি তাদের উপর হামলা চালিয়েছেন।
কিন্তু তারা বলেন,আমাদেরকে দুই ছান্দবাসী একত্রিত হয়ে মারপিট করেছে এখন আবার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।
এবার যদি এদিকে আসতে চায় তারা।তাহলে সবাই শহীদ হয়ে যাবো তারপরও পিছপা হবোনা আমরা।
এক পর্যায়ে তারা ২০/৩০মিনিট অবস্থান করার পর আড়াইটায় জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধে,যার যার বাড়িতে চলে যান মাঠে অবস্হানরত সবাই।
এদিকে সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হচ্ছে,মসকুদ(২৫)সাবাজ(৪২)আনজুর(৩৫)সায়েম(২২) আবিদুর(৩০)লাল মিয়া(৩৫)মনছুর(৪০)অলি হোসেন(৩৭)জমির(৩৬)অপু সরকার(৩০)নিপু(৩০)সাজিদ(২৩)নূরুল আমীন(৪০) সাজলু(৩১)ফজলু(৪২)জিলু(২৮)নাজমুল(২৮)হারুন(৩৮) জসিম(৪০)আনসার মিয়া(৩৭)।
মজলিশপুর গ্রামের নজির মিয়া(২২)কে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরন করার খবর পাওয়া যায়।
এলাকাবাসী ও থানা সূত্রে জানা যায়,কানিভাঙ্গা নামক জলাশয়টি কামালখানী ছান্দবাসীর এবং তারা এবারও বাধ দেন।
কিন্তু মজলিশপুর ছান্দের লোকজন বৃহস্পতিবার রাতে আধারে বাধটি ভেঙ্গে ফেলে দেয়।পরবর্তীতে কামালখানী গ্রামের লোকজন মজলিশপুর গ্রামের লোকজনকে অবগত করা হলে তারা কোন প্রকার জবাব না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাধের এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেন।
এতে মজলিশপুর ছান্দবাসী মাইকে ঘোষনা দিয়ে তাদের লোকজনকে ঘটনাস্থলে দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসার আহবান জানায়।
এদিকে কামালখানী ছান্দের লোকজনও মাইকে ঘোষনা দিয়ে তাদের লোকজনকে ঘটনাস্থলে আসার আহবান জানায়।
এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।সংঘর্ষটি থামাতে থানা পুলিশ উভয় পক্ষকে ছত্র ভঙ্গ করে দেওয়ার পরও দফায় দফায় সংঘর্ষটি চলতে থাকে।এক পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসনের আওতায় চলে যায় পরিস্থিতি এবং শান্ত হয়ে পড়ে।
এব্যাপারে দুপুর ২টা ৪৭মিনিটে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাসুদ রানা’র সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ,জনপ্রতিনিধি সহ উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে পৌছে উভয় পক্ষকে শান্ত করেছে।বর্তমানে প্রশাসনের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে উভয় তিনটি ছান্দের এলাকা।