ওপেনিং নিয়ে বাংলাদেশ দলের সমস্যাটা যেন চিরায়িত। কিছুতেই যেন মিলছে না এ সমস্যার কার্যকরী কোন উপায়। তবে সাকিবের কল্যাণে মিলেছিলো তিন নম্বরের সমাধান। তবে সাকিবহীন চলমান শ্রীলঙ্কা সফরে আশঙ্কা জাগলেও টাইগাররা মিঠুনের নির্ভরশীল ব্যাটেই যেন খুঁজে পেল সাকিবের বিকল্প!

হ্যাঁ পাঠক, শ্রীলঙ্কার দেয়া ২৮৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে লাহিরু কুমারার তোপের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। ওপেনিংয়ে ফুটে ওঠে সেই চিরায়ত সমস্যা। দলীয় ৫৮ রানেই দুই ওপেনার সৌম্য ও তামিমকে হারায় দল। ফলে শুরুতেই চাপে পড়ে বাংলাদেশ।

এ দুজনকে হারিয়ে দল যখন চাপের মুখে, তখনই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন মুশফিকুর রহিম ও মোহাম্মদ মিঠুন। এ জুটিতেই মূলত জয়ের ভিত পায় টাইগাররা। ফিফটি তুলে মুশি সাজঘরে ফিরলেও মিঠুনের নির্ভরশীল ব্যাটে চড়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ।

এদিন তিনে ব্যাট করতে নেমে সাকিবের অভাবটা বেশ ভালোভাবেই পূরণ করেন মোহাম্মদ মিঠুন। যদিও মাত্র ৯ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন তরুণ এ ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সাজঘরে ফেরার আগে ১০০ বলে এগারটি চার ও একটি বিশাল ছক্কায় ৯১ রানের ম্যাচজয়ী এক অনবদ্য ইনিংস খেলেন মিঠুন।

৪৬তম ওভারে মিঠুন যখন ফেরেন, তখন জয় থেকে মাত্র ২১ রান দূরে দল। যে দূরত্ব কমিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছতে একটুও বেগ পেতে হয়নি সাব্বির ও মোসাদ্দেকের দায়িত্বশীল ব্যাটে। অনায়াসেই টপকে যায় ১১ বল বাকি থাকতেই।

হ্যাঁ, বলছিলাম সাকিবের বিকল্পের কথা। মিঠুনই সেই বিকল্প। ভুল বললাম কি? আমার মনে হয়, একটুও না। যদিও এটা ছিলো প্রস্তুতিমূলক একটা ম্যাচ। মূল ম্যাচগুলো এখনও বাকি থাকায় অনেকে হয়তো এটাকে পাগলামি বলতে শুরু করেছেন।

তা বলতেই পারেন। কিন্তু আজ তিনে নেমে মিঠুন যে ব্যাটিংটা করলেন, এক কথায় অনবদ্য। মুগ্ধতা ছড়ানো ইনিংস। দলীয় ৪৫ রানে সৌম্য আউট হলে ক্রিজে আসেন মিঠুন। চেষ্টা করেন তামিমের সঙ্গে জুটি বাধার। তবে ৫৮ রানের সময় তামিমও আউট হয়ে গেলে বেশ চাপেই পড়ে বাংলাদেশ।

সেই চাপ থেকে মুশফিককে নিয়ে দেখেশুনে খেলে ধীরে ধীরে নিজের ইনিংসকে যেমন লম্বা করেন, ঠিক তেমনি দলকে চাপমুক্ত করে পাইয়ে দেন জয়ের ভিত। সেইসঙ্গে মুশফিকের সঙ্গে ৭৩ রানের এবং মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ৯৬ রানের দু`দুটি গুরুত্বপূর্ণ জুটি। যা ২৮৩ রান তাড়া করতে বেশ সহজ করে দেয় অন্যদের জন্য।

বিশ্বকাপেও এমনটি করতে দেখা গেছে সাকিব আল হাসানকে। ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যানের অভাব ঘুচিয়ে একজন বীর যোদ্ধার মত বুক চিতিয়ে লড়াই করে হয়েছেন সেরা রান সংগ্রাহকদের মধ্যে তৃতীয় (৬০৬)। যা অতীতে করতে দেখা গেছে- রাহুল দ্রাবিড়, কুমার সাঙ্গাকারা, রিকি পন্টিংয়ের মত সাবেক ওয়ানডাউন গ্রেটদের।

যেমনটি আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে করে দেখালেন আরেক টাইগার মোহাম্মদ মিঠুন (৯১)। তাইতো মিঠুনকেই ভাবা হচ্ছে সাকিবের বিকল্প, যদিও এটা প্রমাণ করতে সামনে অনেক দূর যেতে হবে ডানহাতি এই তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। মূলত সেই লক্ষ্যেই হাঁটছেন তিনি।

সেইসঙ্গে কার্যকর একটা সমাধান হোক টাইগারদের ওপেনিংয়ে। তামিম-সৌম্য এনে দিক লম্বা জুটি। তাহলেই নিয়মিত জয়ের উৎসবে মাতবে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেই আশা কোটি কোটি ক্রিকেট ভক্তের।