দেড় যুগের সাংবাদিকতা আর রাজনৈতিক জীবনের নানা উত্থান-পতন পেরিয়ে অবশেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা বরিস জনসন। বুধবার দেশটির নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন তিনি। মাত্র কয়েক ঘন্টা বাদেই জীবনের সেরা স্বপ্নটি পূরণ হতে চলেছে এই সাংবাদিকের।

ঘনিষ্ঠ মিত্রদের ‘বিশ্বাসঘাতকতায়’ মাত্র কয়েক বছর আগেও যার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শেষ দেখা যাচ্ছিল। যার উল্টোপাল্টা মন্তব্য অনেকবারই কনজারভেটিভ নেতৃত্বকে বিব্রত করেছে, অবশেষে সেই জনসনই যাচ্ছেন ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে।

এ উপলক্ষে বুধবার বিকেলেই যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে সম্মানের পাত্র রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আমন্ত্রণে বাকিংহাম প্যালেসে যান নেতৃত্ব দেয়া কনজারভেটিভ পার্টির এ নেতা। মূলত নতুন করে সরকার গঠনের জন্যই তাঁকে আমন্ত্রণ জানান রানী।

এর আগে মঙ্গলবার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি তাদের নতুন প্রধান হিসেবে ঘোষণা করে ৫৫ বছর বয়সী সাবেক এ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম। তার পুরো নাম আলেকজান্ডার বরিস দ্য ফেফেল জনসন।

ব্রেক্সিট নিয়ে বেহাল দশায় এ বছরের জুনে থেরেসা মে ক্ষমতাসীন টোরি দলের নেতৃত্ব ও প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দেয়ার পর কয়েক সপ্তাহের নেতৃত্ব নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষে ‘কট্টর ব্রেক্সিটপন্থি’ জনসন ওই পদে স্থলাভিষিক্ত হন।

নির্বাচনের চূড়ান্ত পর্যায়ে জনসনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেরেমি হান্টের সঙ্গে। তবে দলের নিবন্ধিত কর্মী-সমর্থকরা শেষ পর্যন্ত এই সাংবাদিক ও লন্ডনের সাবেক মেয়রকেই বেছে নিয়েছেন।

মূলত রাজনীতিতে আসার আগে পেশা হিসাবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেন জনসন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরুনোর পরই জনসনের সাংবাদিক জীবন শুরু হয়। ১৯৮৭ সালে টাইমসে প্রতিবেদক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর কাল্পনিক একটি উদ্ধৃতি ব্যবহারের জন্য চাকরি হারাতে হয় তাকে।

এরপর আরও দু`একটি পত্রিকায় কাজ করার পর যোগ দেন বিখ্যাত দ্য টেলিগ্রাফে। ব্রাসেলসে ইউরোপ বিষয়ক সংবাদদাতা হিসাবে টেলিগ্রাফে ৫ বছর কাজ করেন জনসন। পরে ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত তিনি একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯৪ সাল থেকেই জনসন ‘দ্য স্পেকটেটর’ নামে একটি ম্যাগাজিনে রাজনৈতিক কলাম লেখা শুরু করেন। আর ১৯৯৯ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত তিনি ম্যগাজিনটির সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

এদিকে টেলিগ্রাফে কাজ করার সময় ১৯৯৭ সালে ক্লয়েড সাউথ এলাকা থেকে হাউস অব কমন্সে নির্বাচন করেন জনসন। যদিও সেবার লেবার পার্টির মার্টিন জোন্সের বিপক্ষে জিততে পারেননি তিনি।

তবে ২০০১ সাল থেকে তৎকালীন বিরোধী কনজারভেটিভ পার্টির টিকেটে এমপি নির্বাচিত হলেও তিনি কখনও ছায়া মন্ত্রিসভায় ঢোকেননি। দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতা তাকে তেমন পছন্দ করতেন না।

যার ফলে ২০০৮ সালে সংসদের রাজনীতি ছেড়ে তিনি লন্ডনের মেয়র নির্বাচিত হন এবং তখনই ব্রিটেনের রাজনীতিতে ভিন্ন এক মাত্রা পেয়ে যান বরিস জনসন।

এদিকে সাংবাদিক হিসেবে সুপরিচিত জনসনকে ১৯৯৮ সাল থেকে বিবিসি’র ‘হ্যাভ আই গট নিউজ ফর ইউ’সহ টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত দেখা যেতে থাকে। তবে টেলিভিশন ও রাজনৈতিক অঙ্গনে সুপরিচিত জনসনের রাজনৈতিক উত্থান মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।

স্পেকটেটরের একটি সম্পাদকীয় প্রকাশের জেরে তাকে লিভারপুল সিটির কাছে ক্ষমা চাইতে হয়েছিল। এমনকি এক সাংবাদিকের সঙ্গে প্রেমের গুঞ্জনে ছায়া শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকেও তাকে সরিয়ে দেয়া হয়। অবশ্য এর কোনোটিই ২০০৫ এর নির্বাচনে তার জয়ী হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

সূত্র: বিবিসি