এবার রাজধানীসহ সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। ঢাকায় ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় বেশি। গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও এক হাজার ৯৬ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে।

সরকারি হিসাবেই এ পর্যন্ত ১৩ হাজার ৬৩৭ জন আক্রান্ত এবং আটজনের মৃত্যু হয়েছে; কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ।

চলতি মাসে ১০ দিন ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা থেকে রাজধানীতে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার ওপর জরিপ চালিয়েছেন। ১৮ থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটির ৯৮ ওয়ার্ডের একশ’ স্পটে এ জরিপ কাজ পরিচালনা করা হয়।

এতে দেখা গেছে, ঢাকা উত্তরের চেয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তবে উত্তরের অভিজাত এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭৮ শতাংশ এলাকায় এবং উত্তর সিটি করপোরেশনের ৫৮ শতাংশ এলাকায় অতিমাত্রায় ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

এ চিত্র থেকে বলা যায়, রাজধানীর ঘরে ঘরে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার লার্ভা ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বত্রই মিলছে এডিস লার্ভা। পুরো রাজধানীর বাসিন্দারাই এখন ডেঙ্গু জ্বরের ঝুঁকিতে রয়েছে।

জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা, উত্তরা এবং দক্ষিণের ধানমণ্ডি, গেণ্ডারিয়া, স্বামীবাগ, মায়াকানন ও সবুজ কানন এলাকায় এডিস লার্ভার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।

জরিপ কাজের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটির গুলশান ও বনানী এলাকায় এডিস মশার লার্ভার মাত্রা ২৫০-এর মতো পাওয়া গেছে। উত্তর সিটির মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ মাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এ ছাড়া দক্ষিণ সিটির স্বামীবাগ এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। এই এলাকায় এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি ৯০ মাত্রায় পাওয়া গেছে। মায়াকানন ও সবুজ কানন আবাসিক এলাকায় ৮০ মাত্রায় লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। লার্ভার মাত্রা ২০-এর বেশি হলে সেটিই ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা) ডা. আক্তারুজ্জামান জানান, জরিপকাজ শেষ হলেও চূড়ান্ত ফল এখনও হাতে আসেনি। সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ চলছে। এই কাজ শেষ হলে জরিপের ফল সবাইকে জানানো হবে।

তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে জরিপে যা দেখা গেছে, সে অনুযায়ী গুলশান ও বনানী এলাকায় এডিস মশার লার্ভার বেশি উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অন্য অনেক এলাকায় কমবেশি লার্ভার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। শুধু অভিজাত এলাকা নয়, এর বাইরেও বিভিন্ন এলাকায় লার্ভার উপস্থিতি মিলেছে। তবে নির্মাণাধীন ভবন, ডাবের খোসা, টায়ার, পানি জমে থাকা বিভিন্ন পাত্রের মধ্যে অধিকমাত্রায় লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।