ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানাধীন কদমতলী এলাকায় সংঘটিত অভিনব কায়দায় প্রতারণা, প্রতারকচক্রের দলনেতাসহ দুই সদস্য গ্রেফতার করেছেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ওমানি মুদ্রা, বাংলাদেশী টাকা ও এটি সিএনজি জব্দ করে পিবিআই ঢাকা জেলা। মামলার ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ও প্রতারক চক্রের দলনেতা আসামী,মোঃ আল আমিন,(৩৫)মোঃ শাহজাহান সিরাজ (৪৬)ডিএমপি ঢাকাদ্বয়কে ২৮/০৮/২০২১ তারিখ বিকাল ১৭:১০ ঘটিকায় ডিএমপি উত্তরা পশ্চিম থানাধীন খালপাড়স্থ সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস অফিসের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
একই তারিখ দুপুর অনুমান ০২:৩০ ঘটিকায় ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তার কাছ থেকে নগদ ২০০০০০(দুই লক্ষ) টাকা নিয়ে ফেরার পথে কদমতলী চৌরাস্তার পূর্ব পাশে জাহিদ মার্কেটের সামনে দিয়ে পায়ে হেটে যাওয়ার সময় রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকা একটি সিএনজি’র ড্রাইভার তাকে স্যার বলে সম্বোধন করে ডাক দেয়। তিনি উক্ত সিএনজি’র কাছে গেলে ড্রাইভার তাকে কয়েকটি বিদেশী মুদ্রার নোট দেখিয়ে কোথায় একচেঞ্জ করা যাবে জানতে চায়। তখন মোঃ লুৎর্ফ রহমান উল্লেখিত সিএনজি ড্রাইভারকে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ভাঙ্গানো যায় বলে জানালে উক্ত ড্রাইভার তাকে ২০/২৫টি বিদেশী কারেন্সী দেখায় এবং ভাঙ্গানো হলে কত টাকা পাওয়া যাবে জানতে চায়।
তখন সিএনজি’র কাছে অজ্ঞাতনামা আরো ২ জন ব্যক্তি আসে এবং মোঃ লুৎর্ফর রহমানের পাশে দাড়ায়। তাদের একজন ব্যাংকে চাকুরী করে এবং অপরজন মানি এক্সচেঞ্জে চাকুরি করে বলে জানায়। তারা জানায় বিদেশী টাকাগুলো অনেক দামী এবং ওমানী কারেন্সী নোট। মানি এক্সচেঞ্জের দোকানে ভাঙ্গালে অনেক টাকা পাওয়া যাবে। তাদের একজন তখন লুৎফর রহমানকে দেখিয়ে ৪০০০০(চল্লিশ হাজার) টাকা দিয়ে সিএনজি ড্রাইভার এর নিকট থেকে ০৪টি নোট কিনে নেয় এবং লুৎফর রহমানকে উক্ত নোট কেনার জন্য প্রলুব্ধ করে। সিএনজি ড্রাইভার এর কাছে আরো ২০/২২টি নোট রয়েছে বলে জানায় এবং এই নোট গুলোর বর্তমান বাজারমুল্য প্রতিটি ২২০০০/-(বাইশ হাজার) টাকা বলে জানালে তাদের কথায় বিশ্বাস করে উল্লেখিত লুৎফর রহমান সিএনজি ড্রাইভারকে নগদ ২০০০০০(দুই লক্ষ্) টাকা দিয়ে ২০ টি ওমানী কারেন্সী নোট নেন। তখন সিএনজি ড্রাইভার সহ উল্লেখিত অজ্ঞাত ২ জন ব্যক্তি সিএনজিতে করে দ্রুত বাবু বাজারের দিকে চলে যায়। পরবর্তিতে লুৎফর রহমান জানতে পারেন যে সে তাদের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়ে ২০০০০০(দুই লক্ষ) টাকা হারিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি গত ২৭/০৮/২০২১ তারিখে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানায় গিয়ে মামলা নং-৮৭ তারিখ-২৭/০৮/২০২১ ধারা-৪২০/৪০৬/পেনাল কোড তৎসহ ১৯৪৭ সালের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনের ২৩ দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই’র সিডিউলভুক্ত হওয়ায় পিবিআই ঢাকা জেলা স্ব-উদ্দোগে মামলাটির তদন্ত অধিগ্রহণ করে।ডিআইজি পিবিআই বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম(বার),পিপিএম এর সঠিক তত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই ঢাকা জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম পিপিএম-সেবা এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ আনোয়ার হোসেন মামলাটি তদন্ত করেন।
গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, তারা দীর্ঘদিন ধরে তাদের আরো সহযোগিকে নিয়ে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অধিক টাকার লোভ দেখিয়ে বিভিন্ন মানুষের সাথে অভিনব কায়দায় এভাবে প্রতারণা করে আসছে। তারা জনৈক লুৎফর রহমানের সাথে গত ২৩/০৮/২০২১ তারিখে দক্ষিন কেরানীগঞ্জ থানাধীন কদমতলী চৌরাস্তায় প্রতারণা করে তার নিকট থেকে নগদ ২০০০০০(দুই লক্ষ) টাকা হাতিয়ে নিয়েছিল বলে স্বীকার করে।আসামী আল আমিনের কাছ থেকে ১০০ ভায়েসার ৪০টি ওমানী মুদ্রা ও নগদ ১০০০০ (দশ হাজার) টাকা এবং আসামী শাহজাহান সিরাজের নিকট থেকে ১০০ ভায়েসার ১৮ টি ওমানী মুদ্রা ও নগদ ১০০০০ (দশ হাজার) টাকা এবং প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিএনজি যার রেজিঃ নং- ঢাকা মেট্রো-থ-১৬-০৯৪৩ জব্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পিবিআই হেডকোয়ার্টারে ২৯ আগস্ট দুপুর ২টায় সংবাদ সম্মেলন করেন ঢাকা জেলার এসপি জনাব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম পিপিএম-সেবা সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করে তিনি বলেন, আসামী আল আমিন এই সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের দলনেতা । তারা দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘবদ্ধ ভাবে অভিনব কায়দায় বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনকারীদেরকে পর্যবেক্ষনে রেখে তাদের পিছু নেয় এবং সুকৌশলে তাদের শিকারকে বিভিন্ন দেশের কারেন্সী নোট প্রদর্শন করে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে সহজ সরল মানুষকে খুব সহজেই শিকারে পরিনত করে তার নিকট থেকে সমস্ত টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যায়।