বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ০১ নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। গ্রেফতারকৃতের নাম জোবাইদা সিদ্দিকা নাবিলা।

এসময় তার হেফাজত হতে জঙ্গীবাদের কাজে ব্যবহৃত সিমকার্ড ও মেমোরিকার্ডসহ মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ২৬ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর বাড্ডা থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাকে গ্রেফতার করে সিটিটিসির সিটি-ইন্টেলিজেন্স এ্যানালাইসিস ডিভিশনের সাইবার ইন্টেল টিম।

আজ রবিবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ১২টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোঃ আসাদুজ্জামান, বিপিএম (বার)। সিটিটিসির প্রধান বলেন, গ্রেফতারকৃত নাবিলা ২০২০ সালের প্রথম দিকে নিজের নাম পরিচয় গোপন করে ছদ্মনামে একটি ফেইক ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খোলে।

একসময় সে ফেসবুকে আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ “তিতুমীর মিডিয়া” এর খোঁজ পায়। তখন সে এই পেইজে যুক্ত হয়ে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও, অডিও ও আর্টিকেল সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে ও তাদের মতাদর্শকে লালন করে। এর প্রেক্ষিতে “তিতুমীর মিডিয়া” এর পেইজের এ্যাডমিন এর সাথে তার যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে “তিতুমীর মিডিয়া” এর পেইজের এ্যাডমিন উগ্রবাদী জিহাদী কনটেন্ট সম্বলিত আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটসমূহের লিংক তাকে প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত নারী জঙ্গী আনসার আল ইসলামের সেসব অফিসিয়াল ওয়েবসাইট সমূহে প্রবেশ করে ও তাদের উগ্রবাদী মতাদর্শকে কঠোরভাবে লালন করে। তাদের মতাদর্শকে সবার সাথে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অনলাইন মিডিয়া প্লাটফর্মকে বেছে নেয়। এরই ফলশ্রুতিতে গ্রেফতারকৃত নাবিলা ফেসবুক, টেলিগ্রাম ও “Chirpwire” নামক অনলাইন প্লাটফর্মসমূহে বিভিন্ন ছদ্মনামে একাধিক এ্যাকাউন্ট খোলে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জঙ্গীবাদী প্রচারণার নিমিত্তে ২ টি ফেইক ফেসবুক একাউন্ট, ১ টি “Chirpwire” ও ৪ টি টেলিগ্রাম একাউন্ট এর তথ্য পাওয়া যায়। সে ফেসবুকে ফেইক এ্যাকাউন্ট দিয়ে ব্যাপক হারে আনসার আল ইসলামের উগ্রবাদী সহিংস মতাদর্শ প্রচার, বিভিন্ন উগ্রবাদী প্রচারণাকারী আইডির সাথে নিয়মিত যোগাযোগ ও বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করতো। সে আনসার আল ইসলামের মতাদর্শ প্রচারের জন্য ব্যাপকভাবে টেলিগ্রাম মাধ্যম ব্যবহার করে। Encrypted Secured Apps টেলিগ্রাম ব্যবহার করে সে ৪ টি একাউন্ট এবং উক্ত টেলিগ্রাম একাউন্টের মাধ্যমে ১৫ টির অধিক চ্যানেল নিজে খুলে তা পরিচালনা করতো। এসব চ্যানেলে সে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন উগ্রবাদী সহিংস ভিডিও, অডিও, ছবি ও ফাইল শেয়ার করতো।

তার নিজের সবগুলো টেলিগ্রাম চ্যানেল মিলে আনুমানিক ২৫ হাজার Subscriber আছে, যারা নিয়মিত তার চ্যানেলগুলো অনুসরণ করে। গ্রেফতারকৃত নাবিলা তার টেলিগ্রাম চ্যানেলগুলোতে ‘জিহাদ কেন প্রয়োজন’, Kitabul Jihad, ‘একাকি শিকারি লন উলফ’, ‘স্নিপার সেল গুলোতে গোয়েন্দাদের অনুপ্রবেশ ও প্রতিরোধের উপায়’, ‘নীরবে হত্যার কৌশল’, ‘পুলিশ শরীয়তের শত্রু’, Lone_wolf-balakot-media-hq, ‘আল আনসার ম্যাগাজিন ইস্যু’, ‘জিহাদের সাধারণ দিক নির্দেশনা’, ‘তাগুতের শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণা’ ইত্যাদি ছাড়াও আরও অসংখ্য উগ্রবাদী সহিংস জিহাদী প্রচারণার বই বিভিন্ন সময় আপলোড করতো। এছাড়া সে নিজে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন অফিসিয়াল ও আন-অফিসিয়াল চ্যানেলে যুক্ত ছিল। সেই চ্যানেলে IED, Smoke Bomb” আগ্নেয়াস্ত্র ইত্যাদি তৈরি করা ও বিভিন্ন হামলায় কৌশলগত বিষয়ক ভিডিও এবং ফাইল শেয়ার করতো।

তিনি আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত নাবিলা আনসার আল ইসলামের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে Encrypted Social Media “Chirpwire” এ একাউন্ট খোলার নির্দেশনা পেয়ে সেখানেও একাউন্ট খুলে উগ্রবাদী প্রচারণা চালাতো। এসব প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গ্রেফতারকৃত নারী জিহাদের ময়দানে অংশগ্রহণের জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে তার বিবাহের কথাবার্তা চললে সে ছেলে পক্ষকে জানায়, সে জিহাদের ময়দানে ডাক আসলে সামনের সারিতে থাকবে ও শহীদি মৃত্যু আসলেও সে পিছু হটবে না এবং ছেলে এরূপ মতাদর্শের না হলে সে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না।

এ সংক্রান্তে গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে বাড্ডা থানায় একটি নিয়মিত মামলা রুজু হয়। সে বিজ্ঞ আদালতের আদেশে ৫ দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে আছে। মামলার তদন্ত অব্যাহত আছে।