জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরু কাল, নিয়োগ দেয়নি নতুন রাষ্ট্রদূত

আফগানিস্তানে তিন কোটির বেশি মার্কিন ডলারের চীনা সহায়তার আশ্বাস, তালেবান নেতাদের চীন সফর ও চীনের সঙ্গে কাবুলের তালেবান নেতৃত্বের যোগাযোগ—এগুলোকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি মনে করলে ‘ভুল’ হবে। চীন কি তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছে—এমন প্রশ্নের জবাবে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, আফগানিস্তান পুনর্গঠনে সহায়তার জন্য তাঁরা তালেবান নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

সফর বিনিময় চললেও তালেবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক আছে পাকিস্তানও। আর এখনই তালেবানকে স্বীকৃতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই দেশগুলো নিয়ে গঠিত পাঁচ দেশীয় জোট ব্রিকসের সম্মেলন শেষে গত শুক্রবার দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী নলেদি পান্ডুর বলেছেন, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার বিষয়ে যত দিন না তালেবানের কাছ থেকে আশ্বাস মিলছে, তত দিন ব্রিকস দেশগুলো তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগেরবার যখন তালেবান আফগানিস্তানে সরকার গঠন করেছিল, তখন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এবার সবাই সতর্ক। এরই মধ্যে আগামীকাল মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন শুরু হচ্ছে। সেই অধিবেশনে মিয়ানমারের কোন পক্ষ প্রতিনিধিত্ব করবে, তা নিয়ে আগ্রহ আছে বিশ্বসম্প্রদায়ের। জাতিসংঘে এবার মিয়ানমারের পর আফগানিস্তানের রাষ্ট্রদূত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

নিউ ইয়র্ক থেকে পাওয়া খবরে জানা গেছে, জাতিসংঘে আফগানিস্তানের বর্তমান রাষ্ট্রদূত গোলাম এম ইসাকজাইকে নিয়োগ দিয়েছিল প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সরকার। গত ১৫ আগস্ট ওই সরকারের পতন ঘটলেও গোলাম ইসাকজাই এখনো আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করছেন। তিনি তালেবানের নৃশংসতার নিন্দাও জানিয়েছেন।

জাতিসংঘে এমন পরিস্থিতি চলছে মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও। জাতিসংঘে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত পদের দাবিদার এখন দুই পক্ষ। একটি মিয়ানমারের জান্তা, অন্যটি মিয়ানমারের সর্বদলীয় জাতীয় ঐক্যের সরকার। জাতিসংঘে এখন মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করছেন সু চির সরকারের নিয়োগ করা রাষ্ট্রদূত। গত ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে জান্তা ক্ষমতা দখল করলেও জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূতকে সরাতে পারেনি। আগামীকাল সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর পর ক্রেডেনশিয়াল কমিটি অনুমোদন পাবে। সেই কমিটিই পরবর্তী সময়ে ঠিক করবে কে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্ব করবে।

জানা গেছে, মিয়ানমারের সঙ্গে আফগানিস্তানের পার্থক্য হলো তালেবান গত সপ্তাহ পর্যন্ত নতুন কাউকে রাষ্ট্রদূত পদে মনোনয়ন দেয়নি। এমনকি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন শুরুর অন্তত এক সপ্তাহ আগে প্রতিনিধিদের নাম পাঠানোর কথা থাকলেও তা অনুসরণ করেনি তালেবান। 

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবানের আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসাকে আমলে নিয়েছে, কিন্তু এখনো সরকার গঠনকে স্বীকৃত দেয়নি। এটি তালেবানের কৌশলও হতে পারে। কারণ তালেবান কাউকে রাষ্ট্রদূত মনোনীত করলে তাঁকে গ্রহণ করা না করার মধ্য দিয়ে ওই সরকারের বৈধতারও স্বীকৃতি দেওয়া বা না দেওয়ার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। তাই তালেবান নতুন কাউকে জাতিসংঘে রাষ্ট্রদূত মনোনীত না করে নিজেরা স্বীকৃতির পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া এড়িয়েছে। তাই তালেবানও এ ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করছে না। তবে এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূত গোলাম এম ইসাকজাই যদি তালেবানের বিরুদ্ধে সরব হন, তাহলে তাদের জন্য আবার বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

জানা গেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো তালেবানের কর্মকাণ্ড দেখার অপেক্ষায় আছে। তালেবান দীর্ঘদিন ধরে জাতিসংঘের নিষিদ্ধ তালিকায় ছিল। শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য এই গোষ্ঠীকে ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। গত ৩০ আগস্ট জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত প্রস্তাবে তালেবানের কাছে বেশ কিছু প্রত্যাশা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স সতর্ক করে বলেছে, প্রস্তাব বাস্তবায়নের ভিত্তিতেই তালেবান সরকারকে বিচার-বিবেচনা করা হবে।

এই অঞ্চলের দেশগুলো আফগানিস্তান ইস্যুতে প্রায় অভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রে সবাই পরিস্থিতি দেখার ও অপেক্ষা করার কথা বলছে। এটি বাংলাদেশেরও অবস্থান।