জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ভিভিআইপি চাটার্ড ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা।
জাতিসংঘের ৭৬তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নিতে আগামী রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্ক পৌঁছবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিনিধি দলে আরো থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ অনেকে।
এবারের অধিবেশনের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে, ‘কভিড-১৯ থেকে পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে স্থিতিশীল ব্যবস্থা গড়ে তোলা, টেকসই পুনর্গঠন, ধরনীর চাহিদার প্রতি সাড়া দেওয়া, মানুষের অধিকারকে সম্মান জানানো এবং জাতিসংঘকে পুনরুজ্জীবিত করা’।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। তবে উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্ব শুরু হবে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর। চলবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন থেকে পাঠানো একটি বার্তায় জানানো হয়েছে, এবার ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরাবরের মতো এবারো বাংলায় বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে অর্জন এবং স্বাস্থ্য খাতের সাফল্য সম্পর্কে তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে বিশ্বশান্তি, নিরাপদ অভিবাসন, করোনাভাইরাসের টিকার ন্যায্যতাভিত্তিক বন্টন, বৃহৎ পরিসরে করোনা ভ্যাক্সিন উৎপাদনের লক্ষ্যে পেটেন্টসহ মেধাস্বত্ব উন্মুক্তকরণ, ফিলিস্তিনি ও বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সংকট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়গুলো তুলে ধরবেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেন, ‘এবারের অধিবেশনে আলোচ্য সূচির প্রতিটি ইস্যুই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে করোনা মহামারি, রোহিঙ্গা সংকট এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়গুলো একটু বেশি প্রাধান্য পাবে।’ তিনি বলেন, ‘সাধারণ পরিষদের সভায় বক্তব্য দেওয়া ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সাইড ইভেন্টেও বক্তব্য দেবেন। জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি সভা হবে। সেখানেও অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী।’
জানা গেছে, এবারের অধিবেশনের একটি বড় অংশ জুড়ে থাকবে কভিড-১৯ মোকাবেলা এবং পরবর্তী টেকসই পুনর্গঠনের বিষয়টি। বিশ্বব্যাপী ‘ভ্যাক্সিন বৈষম্য’ দূরীকরণের বিষয়টি এবারের অধিবেশনে বিশেষভাবে আলোচিত হবে।
এ ছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবেলার বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব পাবে এবার। এবারের সাধারণ অধিবেশনে ইউএন ফুড সিস্টেম সামিট শীর্ষক একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভার মূল লক্ষ্য হলো টেকসই উন্নয়নের জন্য ক্ষুধা, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য এবং বৈষম্যের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা।
প্রতিবারের মতো এবারো নিরস্ত্রীকরণ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হবে। সাধারণ পরিষদ সভাপতি ২৮ সেপ্টেম্বর পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্রহণ ও এই বিষয়ে বৈশ্বিক সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল ডে ফর দ্য টোটাল এলিমিনেশন অব নিউক্লিয়ার উইপন্স’ বিষয়ে একটি সভার আয়োজন করেছেন।
আগামী সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ও জাতিসংঘ মহাসচিবের আমন্ত্রণে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। একই দিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তর চত্বরে বৃক্ষ রোপণ করবেন। ২২ সেপ্টেম্বর বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজনে হোয়াইট হাউজ গ্লোবার কভিড-১৯ সামিটে বক্তব্য দেবেন। ওইদিনই বাংলাদেশের আয়োজনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সাইড ইভেন্টে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। পরেরদিন বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক সামিটেও বক্তব্য দেবেন তিনি।
প্রতিবছরের মতো এবারো যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কভিড-১৯ এর কারণে এবার সেই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানকে ঘিরে এরইমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর এই আগমণকে নির্বিঘ্ন ও সর্বাত্মক সফল করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন তাঁরা।
মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম এবং বার্বডোজের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা। সাক্ষাৎ করবেন ইউরোপিয়ান কাউন্সিল সভাপতির সঙ্গে। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এছাড়া এবারো যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগ আকর্ষণে তাঁর সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরবেন।