বিশেষ প্রতিনিধি:
ছয় বছর আগে ট্রাঙ্কভর্তি অজ্ঞাত তরুণীর লাশের হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন(পিবিআই)। শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) পিবিআই সদর দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম, এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এসপি প্রশাসন, মোঃ ইকবাল, পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উঃ) পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম। বনজ কুমার মজুমদার বলেন, প্রায় ০৬ বছর আগে ২০১৫ সালের ২ জুন গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে ঈগল পরিবহনের বাসের ট্রাঙ্কে এক অজ্ঞাতনামা মহিলার লাশ পাওয়া যায়। ওইদিন সকালে চট্টগ্রাম এ কে খান মোড়ে ঈগল পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কেটে এক ব্যক্তি বাসে ট্রাঙ্ক তুলে দিয়ে হেলপারকে বলে সামনের ভাটিয়ারী কাউন্টার থেকে উক্ত টিকেটের যাত্রী উঠবে।
কিন্তু পরবর্তী কাউন্টারে বর্ণিত যাত্রী উঠেনি, বাসটি বিকেল ৫ টা ৪৫ মিনিটে গাবতলীতে পৌঁছায়। কেউ ট্রাঙ্কটি না নেয়ায় ড্রাইভার ও হেলপার সন্দেহবশত দারুসসালাম থানায় খবর দেয়। পুলিশ ট্রাঙ্কটি খুলে অজ্ঞাতনামা তরুনীর লাশ দেখতে পান। পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে পোস্টমর্টেম এর জন্য হাসপাতালে প্রেরণ করেন। লাশের পরিচিতি শনাক্ত না হওয়ায় অজ্ঞাত লাশ হিসেবে দাফন করা হয়। পুলিশের পক্ষে এসআই জাহানুর আলী বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে দারুস সালাম থানায় মামলা করেন। ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, মামলাটি তিন মাস থানা পুলিশ তদন্ত করে। সিআইডি দীর্ঘ চার বছর তদন্ত করে। কিন্তু লাশের পরিচয় শনাক্ত না হওয়ায় এবং হত্যা রহস্য উন্মোচিত না হওয়ায় আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। আদালত পিবিআইকে নির্দেশ প্রদান করলে পিবিআই ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে মামলার তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) ইউনিট ইনচার্জ বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলমের তত্ত্বাবধানে তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ ইন্সপেক্টর আশরাফুজ্জামান ভিকটিমকে শনাক্ত করার জন্য সব ধরনের পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এবং জেলা এলাকার সকল থানায় বিগত ২০১৫ সালে এন্ট্রিকৃত নিখোঁজ জিডিসমূহ অনুসন্ধান করে। ওই সময়ে কাছাকাছি প্রায় দশ বারোটি নিখোঁজ জিডির তথ্য উদঘাটন করে। ২০১৫ সালের ১০ জুন ৫৯৯ নম্বর একটি জিডিতে দেখা যায়, শম্পা বেগম চট্টগ্রামের পাহাড়তলী থেকে নিখোঁজ হন। ওই ঘটনায় নিহত শম্পা বেগমের ভগ্নীপতি আব্দুল মান্নান পাহাড়তলী থানায় জিডি করেন। পিবিআই জানায়, উক্ত জিডির সূত্র ধরে তদন্তকারী কর্মকর্তা নিহত শম্পার ভগ্নিপতি জনাব আব্দুল মান্নান এবং শম্পা বেগমের বাবা জনাব ইলিয়াস শেখ এর সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারেন, বিগত ২০১৩ সালে জনৈক রেজাউল করিম স্বপন (অবসরপ্রাপ্ত নৌ বাহিনী সদস্য) খুলনা তিতুমীর নৌঘাঁটিতে কর্মরত থাকাকালীন ভিকটিম শম্পা বেগম হাসপাতালে মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজ করতেন। হাসপাতালে জনাব ইলিয়াস শেখের স্ত্রীর চিকিৎসাকালীন তার মেয়ে শম্পা বেগমের সাথে আসামি রেজাউলের পরিচয় হয়।
এই পরিচয়ের সূত্রে প্রথমে প্রেম এবং পরে ভিকটিম তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে বদলী হয়ে চট্টগ্রামে চলে আসে। এরপর শম্পাও কিছুদিন পরে চট্টগ্রামে চলে আসে। পরবর্তীতে পাহাড়তলী থানাধীন উত্তর গ্রিনভিউ আবাসিক এলাকায় অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য আনোয়ার হোসেনের টিনশেড বাড়ির একটি বাসায় সাবলেট নিয়ে বসবাস শুরু করে। এভাবে তারা ২০১৪-২০১৫ সালের মে মাস পর্যন্ত একত্রে বসবাস করে। এখানে উল্লেখ্য যে তারা স্বামী স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করলেও বিবাহ করেনি। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে এসব বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য দেখা দিলে আসামি রেজাউল করিম স্বপন শম্পাকে গত ০২ মে ২০১৫ ইং তারিখে গভীর রাতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
পিবিআই এর একটি চৌকসদল নিরলসভাবে পরিশ্রম করে ভিকটিমের পরিচয় সনাক্ত ও মূল আসামী রেজাউল করিম স্বপনকে গত (২৪ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার ভোরে কুমিল্লা জেলার ইপিজেড এলাকা হতে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উক্ত আসামী ঘটনার দায় স্বীকার করে আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেছেন।