ইমন হোসাইনঃ

ঢাকার সাভারের বক্তারপুরে আলোচিত পারুল বেগম (৪৫) কে হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে। এই ঘটনায় ঘাতক, মুল পরিকল্পনাকারী ও তার সহযোগি সহ তিনজন আসামী গ্রেফতার করেছে পিবিআই ঢাকা জেলা। গ্রেফতারকৃতরা হলেন পিরোজোপুর থানার ধুপপয়সা গ্রামের মৃত সুলতান হাওলাদারের ছেলে জামাল হাওলাদার @ সামাদুজজামাল(৫০), বাগেরহাট জেলার শরনখোলা থানার ২ নং তাফলিবাড়ি গ্রামের মৃত রহিমের ছেলে মশিউর রহমান মিলন (৪৬)। গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা জেলার লালবাগ থানার শহীদবাগ এবং মিরপুর থানার দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞ আদালতে দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে গ্রেফতারকৃত জামাল এবং মিলন এই ঘটনায় মুল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মংলা থানার ৬ নং চিলা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হালিমের নাম প্রকাশ করে। পরে আসামীদের দেওয়া তথ্য যাচাই বাছাই করে গত ২৬ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে মংলা থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে নিজ বাসা থেকে হালিম মেম্বারকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা জেলা পুলিশ। এই ঘটনায় নিহত পারুল বেগম (৪৫) মেহেরপুর জেলার গাংনী থানার সিন্দুর কোটা মটমোড়া গ্রামের স্বামী পরিত্যাক্তা সাভার থানা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে ফেরি করে কাপড় বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করত। মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ডিসিস্ট পারুল বেগম অজ্ঞাতনামা একজন পুরুষ সহ স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে গত ০৭ সেপ্টেম্বর রাত অনুমান ০৮:০০ ঘটিকায় ঢাকা জেলার সাভার পৌরসভাধীন ২ নং ওয়াডর্, বাড়ি নং-৫০/১১ বক্তারপুরে (নামা বাজার) বাসা ভাড়া করে উক্ত বাসায় উঠেন।

ঐ রাতেই ডিসিস্ট পারুল বেগমকে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতিকারী গলায় জলপাই রংয়ের ওড়না দ্বারা ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে। মৃত লাশের পাশে জনৈক বিল্লাল সরদার নামের এক ব্যক্তির এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ফেলে রেখে যায়। এ বিষয়ে ডিসিস্টের ভাই মমিনুল হক বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় মামলা নং-২৪ তারিখ-০৯/০৯/২০২১ ধারা-৩০২/৩৪ দঃবিঃ দায়ের করেন। সাভারা থানা পুলিশ মামলাটি ১১ দিন তদন্ত করে। পরবর্তিতে গত ২০ সেপ্টেম্বর পিবিআই ঢাকা জেলা স্ব-উদ্যোগে মামলাটির তদন্ত অধিগ্রহণ করে। ডিআইজি পিবিআই জনাব বনজ কুমার মজুমদার, বিপিএম(বার),পিপিএম এর সঠিক তত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই ঢাকা জেলা ইউনিট ইনচার্জ পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ খোরশেদ আলম পিপিএম-সেবা এর সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই (নিরস্ত্র) মোঃ সালেহ ইমরান সহ একটি চৌকস তদন্ত দল মামলাটি তদন্ত করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সালেহ ইমরান জানান, গ্রেফতারকৃত জামাল এবং মিলনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় আসামী বাগেরহাট জেলার মংলা থানার হামিদ হাওলাদারের ছেলে হালিম হাওলাদার (৫২) (মোংলা থানার ৬ নং চিলা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার) একই ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডের প্রতিপক্ষ মেম্বার প্রার্থী বিল্লাল সরদারকে ফাঁসানোর জন্য এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা করে ।

পরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকান্ডের আনুমানিক ২০ দিন আগে হালিম মেম্বার ঘাতক জামাল @ সামাদুজ্জামাল এর সাথে মোংলায় দেখা করে। তখন হালিম মেম্বার ঘাতক জামালকে অগ্রীম হিসেবে নগদ ৫০০০/ (পাঁচ হাজার) টাকা ও বেল্লাল সরদারের এনআইডি’র ফটোকপি প্রদান করে। ঘাতক জামাল তার বন্ধু দর্জি মাষ্টার মোঃ মশিউর রহমান @ মিলন কবিরাজ এর সাথে বিষয়টি শেযার করে এবং টার্গেট এর সন্ধান চায়। তখন দর্জি মাষ্টার মিলন তার পূর্ব পরিচিত ও কথিত স্ত্রী ডিসিস্ট পারুলকে টার্গেট হিসেবে পরামর্শ দেয়। ঘাতক জামাল ডিসিস্ট পারুল বেগমের সাথে প্রেমের অভিনয় করে ও তাকে বিয়ে করার প্রলোভন দেখিয়ে সাভারের বক্তারপুরে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিতে প্রলুব্ধ করে। তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে গত ০৭ সেপ্টেম্বর বাসায় উঠে এবং পরিকল্পনা মতে উক্ত তারিখ দিবাগত রাতেই ডিসিস্ট পারুল বেগমকে আসামী মোঃ জামাল হাওলাদার @ সামাদুজজামাল(৫০) গলায় জলপাই রংয়ের ওড়না দ্বারা ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে। এর পর পরিকল্পনা অনুযায়ী মৃতার লাশের পাশে জনৈক বিল্লাল সরদার নামের এক ব্যক্তির এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ফেলে রেখে যায়। এনআইডি’র সূত্র ধরে পিবিআই’র তদন্ত দল বিল্লাল সরদারকে খুজে পায় এবং তার ব্যাপারে তদন্ত করে নিশ্চিত হয় য়ে, সে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত নয়। তার সাথে যোগাযোগ করে তদন্ত দল জানতে চায় তার কোন শত্রুতা রয়েছে কি না যে তাকে হত্যা মামলায় ফাঁসাতে পারে। তখন সে তার প্রতিপক্ষ মেম্বারপ্রার্থী হালিম হাওলাদার সহ দুই জনের নাম বলে। সেই সাথে ২০ সেপ্টেম্বর তার নির্বাচনী এলাকায় সে ইউপি প্রার্থী বলেও জানায়। এনআইডি কার্ড এবং বিল্লাল মেম্বারের প্রপ্তিপক্ষ কয়েকজনের ব্যাপারে তদন্ত করে পিবিআই জানতে পারে এ হত্যাকান্ডের আগে পরে হালিম হাওলাদারের সঙ্গে ঢাকায় অবস্থানরত একজন সন্ধিগ্ধ ব্যক্তির সন্দেহজনক যোগাযোগ রয়েছে।

পরে সন্ধিগ্ধ ব্যক্তির ব্যাপারে অনুসন্ধান করে ঘাতক জামাল হাওলাদার @ সামাদুজ্জামাল (৫০) এর পরিচয় নিশ্চিত করা হয় এবং তাকে লালবাগ থানার শহীদনগর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত জামাল এর ছবি সাভারে ভাড়া বাসার কেয়ারটেকারকে দেখালে সে জামালকে সনাক্ত করে। জামালকে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে এবং এ পরিকল্পনায় জড়িত হালিম মেম্বার সহ অন্যান্য সহযোগী আসামীদের নাম জড়িয়ে বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃকাঃবিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে।

বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘খুনের এ ধরনের মোটিভ খুবই দুঃখজনক। তবে এটা পিবিআই নিশ্চিত করতে চায় যে, এ ধরনের খুনের ঘটনায় খুনিদের কোনো পরিকল্পনাই সফল হবে না। যেকোনো উপায়েই হোক না কেন অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’