গত ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে টঙ্গী পশ্চিম থানায় এক ভুক্তভোগী প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে “ধামাকা শপিং ডট কম” এর পরিচালনা বিভাগের কয়েকজনের নামে মামলা করে। এজাহারের সূত্র ধরে আজ ভোরে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২ এর অভিযানে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকা হতে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ‘ধামাকা শপিং ডট কম’ এর (১) মোঃ সিরাজুল ইসলাম রানা (৩৪) ও মোঃ ইমতিয়াজ হাসান সবুজ (৩১) এবং মোঃ ইব্রাহিম স্বপন (৩৩) কে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত মোঃ সিরাজুল ইসলাম রানা ধামাকা শপিং ডট কম সিওও ইমতিয়াজ হাসান সবুজ, ক্যাটাগরি হেড মোবাইল ফ্যাশন ও লাইফ স্টাইল এবং ইব্রাহীম স্বপন, ক্যাটাগরি হেড “ইলেক্ট্রনিক্স” হিসেবে কাজ করে আসছিলো ।

র‌্যাব জানায়, ২০১৮ সালে ধামাকা ডিজিটাল পরবর্তীতে ২০২০ হতে ধামাকা শপিং ডট কম নামে কার্যক্রম শুরু করে। আটকৃতরা ২০২০ হতে উক্ত প্রতিষ্ঠানটির সাথে যুক্ত ছিলো। গত অক্টোবর ২০২০ হতে প্রতিষ্ঠানটি নেতিবাচক এগ্রেসিভ স্ট্রাটিজি নিয়ে চলতে থাকে। ধামাকা শপিং ডট কম” এর কোন প্রকার অনুমোদন ও লাইসেন্স নেই। ব্যবসায়িক একাউন্ট নেই। তারা ব্যবসা পরিচালনায় ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের একাউন্টের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন করে ব্যাবসা পরিচালনা করে আসছিলো। র‌্যাব আরও জানা যায়, এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন করেছে তারা। এত পরিমান অর্থ লেনদেন হওয়া সত্তে ও বর্তমানে ঐ একাউন্টে ১লক্ষ টাকার কম জমা রয়েছে। বর্তমানে তাদের সেলার বকেয়া রয়েছে প্রায় ১৮০-১৯০ কোটি টাকা, কাস্টমার বকেয়া ১৫০ কোটি টাকা এবং কাস্টমার রিফান্ড চেক বকেয়া ৩৫-৪০ কোটি টাকা। আর্থিক সংকটের কারণে গত কয়েক মাস যাবত প্রতিষ্ঠানের অফিস এবং ডেপো ভাড়া বকেয়া রয়েছে।

পাশাপাশি জুন ২০২১ থেকে কর্মচারীদের বেতন বকেয়া রয়েছে। গত এপ্রিল হতে ধামাকা শপিং ডট কম এর অর্থ অন্যত্র সরিয়ে ফেলার কারণে জুলাই ২০২১ হতে সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় প্রতারক চক্রটি। ধামাকা শপিং ডট কম এর ব্যবসায়িক অবকাঠামো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাব কে জানায়, মহাখালী’তে তাদের প্রধান কার্যালয় এবং তেজগাঁও বটতলা মোড়ে একটি ডেলিভারী হাব রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রায় ৬০০টি ব্যবসায়িক চেইন রয়েছে। তার মধ্যে নামিদামি প্রতিষ্ঠানের নাম পাওয়া গেছে। ধামাকা শপিং ডট কম” ছাড়াও তাদের আরও কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যেমনঃ ইনভেরিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেড, মাইক্রোট্রেড ফুড এবং বেভারেজ লিমিটেড এবং মাইক্রোট্রেড আইসিক্স লিমিটেড ইত্যাদি। জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মূল উদ্দেশ্য ছিলো তৈরিকারক ও গ্রাহক চেইন বা নেটওয়ার্ক থেকে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এছাড়া “হোল্ড মানি প্রসেস প্লান” অর্থ্যাৎ গ্রাহক ও সরবরাহকারীর টাকা আটকিয়ে রেখে অর্থ সরিয়ে ফেলা ছিল অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশাল অফার, ছাড়ের ছড়াছড়ি আর নানাবিধ অফার দিয়ে সাধারণ জনগণকে প্রলুব্ধ করা হত। এভাবে যাহাতে দ্রুততম সময়ে ক্রেতা বৃদ্ধি সম্ভব হয় তাদের।

৩ লক্ষাধিক গ্রাহক নিয়ে তারা ব্যাবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। মোবাইল, টিভি, ফ্রিজ, মোটরবাইক, গৃহস্থলীপণ্য ও ফার্নিচার ইত্যাদি বিভিন্ন অফারে বিক্রি করা হত। সিগনেচারকার্ড ২০%-৩০%, ধামাকা নাইট এ ৫০% পর্যন্ত, রেগুলার এ ২০%-৩০% ছাড় প্রদান করা ইত্যাদি ছিলো গ্রাহক আকৃষ্ট করার কৌশল। সিগনেচার কার্ড অফারটি গত মার্চ- এপ্রিল পর্যন্ত পরিচালনা করে তারা। মাত্র ২০% পণ্য সরবরাহ করে অর্থ সরিয়ে গ্রাহকদের চেক প্রদান করে। এরপর ধীরে ধীরে সকল অর্থ সরিয়ে ফেলা হয় বলে জানা যায়। প্রেস ব্রিফিং এ র‌্যাব জানায়, ধামাকা শপিং ডট কম ব্যবসায়িক কর্মকান্ডে মূলত ইনভেনটরি জিরো মডেল এবং হোল্ড মানি প্রসেস প্লান ফলো করে। কয়েকটি দেশি-বিদেশী ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের আলোকে ধামাকা শপিং ডট কম এর ব্যবসায়িক স্টাটিজি তৈরি করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির কোন ইনভেস্টমেন্ট ছিল না।

ব্যবসায়িক কারসাজি সম্পর্কে সম্পূর্ণভাবে অবগত থেকে বিভিন্ন প্রতারণামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ছিলো আটকৃতরা। এছাড়া তারা বিভিন্ন অপকৌশল প্রনয়ণে প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শ, সুপারিশসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা প্রদান করে আসছিলো।