যৌতুক না দেয়ায় স্বর্ণা বেগমের (৩৫) শরীরে গরম তেল ঢেলে নির্মমভাবেহত্যা করেছেন পাষান্ড স্বামী সজনু মিয়া (৩৮)। বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ সিআইডি সদরদফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর এ তথ্য জানান।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার জানান, ২৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে ঢাকার আশুলিয়া থানাধীনজিরানীর টেঙ্গুরী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে স্বর্ণাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারিইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১২ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে ৬ অক্টোবর ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায়তার মৃত্যু হয়।

তার শরীরের প্রায়য় ৫২ শতাংশ পুড়ে যায়। এ ঘটনায় ১ অক্টোবর ভুক্তভোগীর মা শিরিন বেগম (৫০) বাদী হয়ে নিহতের স্বর্ণার স্বামী সজনুর বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগএনে মামলা করেন।

এ ঘটনা পর সিআইডি ছায়া তদন্ত শুরু করে। তিনি জানান, তদন্ত করতে গিয়ে সিআইডি আসামিঅবস্থান জানার চেষ্টা করে। আসামি একেক সময় একেক জায়গায় অবস্থান করছিল। পরে আসামিঅবস্থান চিহ্নিত করে মঙ্গলবার গভীররাতে সিআইডির এলআইসির একটি টিম কেরানীগঞ্জ এলাকাথেকে সজনু মিয়াকে গ্রেফতার করে। সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্ত ধর জানান, স্বর্ণার সঙ্গে ২০০৭সালে পারিবারিকভাবে সজনুর বিয়ে হয়।

বিয়ের পর তারা জামালপুর সজনুর গ্রামের বাড়িতে থাকত। বিয়ের পর স্বর্ণা জানতে পারে স্বামী সজনুরসঙ্গে এক মহিলার পরকীয়া সম্পর্ক রয়েছে। এই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে বাঁধা দেয় স্বর্ণা। তার ওপরঠিকমতো সংসারের ভরণ পোষণ দিতো না সজনু। প্রায়শই যৌতুকের দাবিতে স্বর্ণা নির্যাতন করতো। এতেকরে তাদের মধ্যে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়।

এ ঘটনার পর এর আগে যৌতুকের দাবিতে শারীরিক নির্যাতন করায় স্বর্ণার দুলাভাই মোঃ ময়নুলইসলাম বাদী হয়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ী থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় আসামি সজনু মিয়াপ্রায় আড়াইমাস কারাভোগ করেন। পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় সজনু মিয়া ও তারপরিবারের সদস্যদের কথার প্রেক্ষিতে বাদী মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়।

বিশেষ সুপার মুক্তা ধর জানান, মামলা তুলে নেয়ার পর স্বর্ণার ওপর আবারও নির্যাতনের মাত্রা বেড়েযায়। স্বামীর সজনুর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় ৬ মাসে আগে সন্তান নিয়ে স্বর্ণা বাবার বাড়িতে চলেযায়। সেখানে সন্তান রেখে আশুলিয়ার জিরানী এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন স্বর্ণা।কিন্তু সজনু কৌশলে তার বর্তমান ঠিকানা সংগ্রহ করে ২৪ সেপ্টেম্বর স্বর্ণা বাড়িতে যান।

সেখানে যৌতুকের টাকা দাবি করেন সজনু। এ টাকা দিতে অসম্মতি জানালে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বর্ণারশরীরে গরম তেল ঢেলে দেয় পাষান্ড স্বামী সজনু। এ ঘটনার পর সজনু রাতেই স্বর্ণাকে জিরানী থেকেসরিষাবাড়ীতে নিয়ে যান। ২৫ সেপ্টেম্বর সকালে তাকে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে নেয়া হয়।

সেখানে স্ত্রীকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নতচিকিৎসার জন্য স্বর্ণাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠায়। সেখানেচিকিৎসাধীন অবস্থায় প্রায় ১২ দিন যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে ৬ অক্টোবর ভোরে স্বর্ণা মৃত্যুর কোলেঢলে পড়েন।

গ্রেফতারকৃত সজনু মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে সিআইডি বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তধর জানান,আসামি তার স্ত্রী স্বর্ণা গরম তেল শরীরে ঢেলে হত্যার দায় স্বীকার করেছে।যৌতুক দিতেঅপরাগতা প্রকাশ করায় এবং স্বামীর বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে বাঁধা দেয়ায় স্ত্রীকে হত্যা করে সজনু।