ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলামের মা অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে মাঝেমধ্যে ফিজিওথেরাপি দিতে হয়। তাই বাসায় ফিজিওথেরাপিস্টদের আসা–যাওয়া ছিল। একদিন ফিজিওথেরাপিস্ট পরিচয় দিয়ে ঢোকেন এক নারী। তিনি আসলে ফিজিওথেরাপিস্ট নন, সংঘবদ্ধ চোর চক্রের প্রধান। তাঁর নাম আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিম।
জাহেদুল ইসলাম বলছিলেন, ‘তাজ্জব হয়ে গেছি, এভাবেও চুরি হতে পারে। আমার বাসা অনেক নিরাপত্তাবেষ্টিত। বাসার দারোয়ান, সিসিটিভি—সবই ছিল। আমার মা অসুস্থ। তাকে সেই তথ্য বলে ফিজিওথেরাপিস্ট পরিচয়ে বাসায় ঢোকেন আফসানা। মাত্র তিন মিনিট বাসায় ছিলাম না। এর মধ্যে মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায় চোর।’
সংঘবদ্ধ এই চক্র ধরা পড়েছে। তাদের নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন জাহিদুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে চোর চক্রের কথা তুলে ধরেন পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মো. আ. আহাদ। তিনি জানান, চিকিৎসক ও নার্সদের অ্যাপ্রোন, মুখে মাস্ক ও গলায় ভুয়া আইডি কার্ড পরে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার কথা বলে অভিজাত পাড়ায় বাসায় ঢুকে অভিনব কায়দায় চুরি করে আসছিলেন চোর চক্রের অন্যতম হোতা কথিত চিকিৎসক আফসানা আক্তার এশা ওরফে মিম ও তাঁর সহযোগীরা। এমন তথ্য পাওয়ার পর গতকাল বুধবার গুলশান থানার পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আফসানা ও তাঁর চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে চোরাই ৬টি ল্যাপটপ, ১০টি মুঠোফোন ও ২টি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন তন্ময় বিশ্বাস (৩০), স্বপন শেখ (৪৫), নুরুল ইসলাম (২৭), কলিম উদ্দিন কালু ওরফে কলিউল্লাহ (৪০) ও মোখলেছুর রহমান (৫১)।
মো. আ. আহাদ বলেন, ‘আমরা একটি চুরির তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর চুরির ঘটনার তথ্য পাই। চোর চক্রের প্রধান আফসানা খুবই ধূর্ত। তার এ রকম অপকর্মের প্রধান সহযোগী গ্রেপ্তার হওয়া তন্ময়। কোনো বাসায় চুরির আগে রেকি (পর্যবেক্ষণ) করেন চোর চক্রের সদস্যরা। বিশেষ করে খোঁজ রাখেন, কোন বাসায় অসুস্থ ও বৃদ্ধ আছেন। কোন বাসায় কখন মানুষ কম থাকে, কখন কারা বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে যায়। তবে সকালের সময়টা চুরির জন্য নিশানা করেন তাঁরা।’
মো. আ. আহাদ বলেন, রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও উত্তরার মতো অভিজাত এলাকা তাঁদের প্রধান নিশানা। এসব এলাকায় এমনও দিন গেছে, একাধিক চুরি করেছেন তাঁরা। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার চক্রের সদস্যরা পুলিশকে বলেছেন, চক্রের প্রধান আফসানার যোগসাজশে কখনো চিকিৎসক, কখনো নার্স পরিচয় দিয়ে বাসায় প্রবেশ করেন তাঁরা। মাত্র দু-তিন মিনিটের মধ্যে ফাঁকা বাসা বা অসুস্থ ব্যক্তিদের উপস্থিতিতেও মুঠোফোন ও ল্যাপটপ নিয়ে সটকে পড়েন
পুলিশ কর্মকর্তা আ. আহাদ বলেন, বাসায় ঢোকার আগে কিছু তথ্য সংগ্রহ করে চক্রটি। সেসব তথ্যের সঙ্গে মিল রেখে পরিচয় দেয়। নারী চিকিৎসক বা নার্স পরিচয় দেওয়া, চিকিৎসক বা নার্সের অ্যাপ্রোন, মুখে মাস্ক ও গলায় পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) দেখে বাসার দারোয়ানেরা সাধারণত সন্দেহ কমই করেন। এই সুযোগই ব্যবহার করে চুরি করে আসছেন তাঁরা। তিনি বলেন, আফসানাসহ গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গুলশান থানাসহ বিভিন্ন থানায় মোট ১৪টি মামলা ও ২টি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। গুলশান, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও থানায় একবার করে মোট চারবার গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন চক্রের হোতা আফসানা। এ ছাড়া চক্রের সদস্য মোখলেছুর রহমান তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।