বিশেষ প্রতিনিধি, মুহাম্মদ রকিবুল হাসান রনি :
মনমুগ্ধকর জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো “আদর্শ একুশ” ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের মিলন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং রোজ শুক্রবার “দ্যা প্যালেস থাই এন্ড চাইনিজ রেস্টুরেন্ট এন্ড পার্টি সেন্টারে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
আদর্শ একুশ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অবঃ প্রাপ্ত সেনা সদস্যদের মিলন মেলা সফল করার লক্ষ্যে ৮ সদস্যের সমন্বয়ে একটি সমন্বয়ক দল গঠন করা হয়। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই সফলতা তাদের নামীয় তালিকা ১। সম্মানিত ক্যাপ্টেন মোঃ নুর ইসলাম (অবঃ)কুষ্টিয়া। ২। সিঃ ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ কবির আহমেদ সাঁতারু (অবঃ),কুমিল্লা। ৩। সিঃ ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ জয়নাল ( অবঃ),মাদারীপুর। ৪। সার্জেন্ট জি এম সাঈদ (অবঃ),বরিশাল। ৫। সার্জেন্ট মোঃ নজরুল ইসলাম (অবঃ), বরিশাল । ৬। সার্জেন্ট মোঃ রজব আলী (অবঃ),যশোর । ৭। সার্জেন্ট ফারুক হোসেন (অবঃ) চুয়াডাঙ্গা। ৮। ল্যাঞ্চ কর্পোরাল মঞ্জুরুল (অবঃ),খুলনা ।
এই ৮ সদস্যের অক্লান্ত পরিশ্রমে যোগাযোগের মাধ্যমে অনলাইনে একটি whatsapp গ্রুপের ( আদর্শ একুশ) খোলা হয়। সর্বপ্রথম এই আটজন সদস্য এই গ্রুপে সংযুক্ত হয়। এক এক করে একে অপরের পরিচিতদের এই গ্রুপে যুক্ত করা শুরু করে। প্রায় ২৫০ জনের অধিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের সংযুক্ত করতে সক্ষম হয়।
পরবর্তীতে বিভিন্ন সভার মাধ্যমে এই মিলন মেলা করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে।
উক্ত মিলন মেলার সর্বপ্রথম দাওয়াত কার্ড নিয়ে ০৯/০২/২৫ ইং তারিখে ময়মনসিংহে অবস্থিত আদর্শ একুশ ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বর্তমান অধিনায়ক, উপ অধিনায়ক, মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার, জেসিও এবং সৈনিকদের নিকট উপরোক্ত ৮ সদস্যের কমিটির প্রধান ৪ সদস্যের একটি দল উপস্থিত হন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ইং তারিখ রোজ শুক্রবার সমগ্র বাংলাদেশ থেকে আদর্শ একুশ এর অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরা সকাল আটটা থেকে এক এক করেঅনুষ্ঠান স্থলে মিলিত হইতে শুরু করে। জুম্মার নামাজের আগে প্রায় ১৫৮ জন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য উপস্থিত হন। কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সকাল ৯ টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। কোরআন তেলাওয়াত করেন সিনিয়র ওয়াঃ অফিসার আব্দুস সালাম বিশ্বাস (অবঃ), পিরোজপুর ।
শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর আদর্শ একুশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন সম্মানিত ক্যাপ্টেন মোঃ নুরুল ইসলাম। তার বক্তব্যের এক পর্যায়ে উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন, অশ্রুসিক্ত হয়ে সকল অবসর সেনা সদস্যরা বলতে থাকেন “আমরা গর্বিত সৈনিক আদর্শ একুশের”। তিনি ২৯ বৎসরের আদর্শ একুশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন এবং বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন।
এক পর্যায়ে আদর্শ একুশ নিয়ে স্মৃতিচারণ করার জন্য বলা হইল সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার মোঃ কবির আহমেদ অবঃ সাঁতারুকে। তিনি বলেন সর্বপ্রথম সকল উপস্থিত অবসরপ্রাপ্ত সদস্যদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। তিনি অশ্রুসিক্ত চোখে বলেন আদর্শ একুশ আমার গর্ব, আমার অহংকার। গত ২৬ বছর এই আদর্শ একুশের সৈনিক ছিলাম আমি। এই আদর্শ ২১ থেকে আমার চাকরি জীবন শুরু, আজ আমি সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার কবির আহমেদ আন্তর্জাতিক সাঁতারু হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছি । আমার হাতে গড়া অসংখ্য সাঁতারু আন্তর্জাতিক মানের সাঁতারু আদর্শ একুশে রয়েছে। যারা এখন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নাম উজ্জ্বল করেছে। একজন প্রশিক্ষক হিসাবে অনেক সময় মনের অজান্তে ভুলবশত কারোর মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে ক্ষমা করে দিবেন তিনি উপস্থিত সকল সদস্যদের প্রতি ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। তিনি সকল সদস্যদের পরিবার ও সন্তানদের প্রতি দোয়া কামনা করেন। তিনি আরো বলেন আমাদের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের সন্তানরা বাংলাদেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন যা আমাদের সেনা সদস্যদের সম্মান বৃদ্ধি করেছে ।
বক্তব্যকালে সকলে একে অপরকে অশ্রুসিক্ত চোখে জড়িয়ে ধরেন। আদর্শ একুশের স্মৃতিচারণ করেন।
আদর্শ একুশের বর্তমান অধিনায়ক দাওয়াত কার্ড পেয়ে অত্যন্ত খুশি হন এবং তিনি এই প্রোগ্রামের একটি অংশ হয়ে থাকার জন্য আদর্শ একুশের পক্ষ থেকে একটি বিশাল কেক আদর্শ একুশের অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের উপহার প্রদান করেন। কেক কাটার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হয়। একে অপরের পরিচয় পর্ব শুরু করেন।
জুম্মার নামাজ শেষে দুপুরের খাবারের মধ্য দিয়ে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু হয়। খাবার শেষে লটারির মাধ্যমে তিনজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যকে উপহার প্রধান করা হয়। এই মিলনমেলাকে স্মরণ রাখতে সকল সদস্যকে আদর্শ একুশ মনোগ্রাম সহ একটি চাবি রিং এবং একটি মগ প্রদান করা হয়।
একে অন্যের মাঝে ছবি তোলার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্তি ঘটে বিকাল ৫ ঘটিকায়।
আগামী বছর এই মিলন মেলাটি সকল অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের পরিবারসহ বড় পরিসরে করার চিন্তাভাবনা করছে সমন্বয়ক কমিটি।