আওয়ামী লীগের নেতারা নিজেরাই তাদের দুর্নীতির প্রমাণ দিচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। আজকে আওয়ামী লীগের যে দুঃশাসন, দুর্নীতি, নির্যাতন, নিপীড়ন, সেটি এখন অন্য কাউকে বলতে হচ্ছে না। নিজে নিজেই বাতাসে কল নড়া শুরু হয়েছে।’
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী যুবদল আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব মন্তব্য করেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে এখন আওয়ামী লীগের লোকেরা, যুবলীগের নেতারা, ছাত্রলীগের নেতারা নিজেরাই প্রমাণ করছেন, বাংলাদেশের সম্পদ লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন। আপনারা লক্ষ করে দেখবেন, গত কয়েকদিন আগে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক ধরা পড়লো শেয়ার-ফেয়ার নিতে গিয়ে। সেই শেয়ার আবার এক-দুই কোটি টাকা নয়, ৮৬ কোটি টাকা। মজার ব্যাপার হলো—যার সঙ্গে কথা হলো, অর্থাৎ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, তার কথোপকথন এরইমধ্যে মোবাইলে বের হয়ে গেছে। আজকে কী অবস্থায় দেশকে নিয়ে এসেছে আওয়ামী লীগ!’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর, যাদেরকে আমরা সম্মান করি, যাদেরকে মাথার ওপরে রাখি, তারাও আজকে ঘুষ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন। আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আন্দোলন করছেন। ভর্তি হচ্ছে বিনা পরীক্ষায়, অর্থাৎ সেখানেও দুর্নীতি চলছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক সবাই রাস্তায় নেমে পড়েছেন। গোপালগঞ্জ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন। তারা বলছেন—এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত। এদেশের মানুষ তাহলে যাবে কোথায়? ভাইস চ্যান্সেলর যাদেরকে সবাই সম্মান করেন, তারাও যদি এই পন্থায় যান, তাহলে তাদেরকে কারা নিয়োগ দিয়েছে? এই অবৈধ সরকার বেছে বেছে সবচেয়ে খারাপ লোকদের নিয়ে তাদের এই পদে দিয়েছে।’
ফখরুল বলেন, ‘আজকে ঢাকা শহরে ৬০টি ক্যাসিনোর কথা পত্রিকায় এসেছে। এর প্রত্যেকটি চালাচ্ছে কে—যুবলীগের নেতারা, আওয়ামী লীগের নেতারা। এখন নিজেরা ধরা পড়েছে, অন্যদের আবার দোষ ধরতে চায়। আজকে প্রমাণিত হয়েছে—এই সরকার দুর্নীতিতে মদত দিচ্ছে। আজকে প্রমাণিত হয়ে গেছে—এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। আজকে প্রমাণিত হয়ে গেছে—গত ১২ বছরে তারাই দেশকে লুটপাট করে শ্মশানে পরিণত করেছে।’
ফখরুল আরও বলেন, ‘জনগণ বুঝতে শুরু করেছে, এই সরকার যতদিন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকবে, ততদিন দেশে আইন থাকবে না। ন্যায়বিচার থাকবে না। মানুষের জীবনের কোনও নিরাপত্তা থাকবে না। এমন একটি দেশ বানানো হয়েছে, যেখানে একটি ছোট্ট শিশু পর্যন্ত ধর্ষিত হচ্ছে। আজকে হত্যা করা হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে—তার কোনও বিচার হচ্ছে না। চতুর্দিকে অশান্তি অনিশ্চয়তায় দেশ ভরে গেছে। মানুষের মনে একটা ভয় সৃষ্টি করেছে সরকার।’
খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি এখন হাঁটতে পারেন না। অন্যের সাহায্য নিয়ে তাকে উঠে দাঁড়াতে হয়। তাকে সুচিকিৎসা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে না। বারবার আমরা বলেছি, তাকে সুচিকিৎসার জন্য মুক্তি দিতে হবে। সরকার তাতে কোনও কর্ণপাত করছে না। আমরা কিন্তু তাদের কাছে দয়া ভিক্ষা চাচ্ছি না, এটা তার ন্যায্য প্রাপ্য অধিকার।’
মানববন্ধনে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।