রংপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। প্রতিটি কেন্দ্রে দিনভর একজন-দুজন করে ভোটারের উপস্থিতি চোখে পড়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্রে সরব উপস্থিতিও সেভাবে ছিল না। ভোট পড়েছে ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ।
নির্বাচনে জাতীয় পার্টির রাহগির আলমাহি সাদ এরশাদ ৫৮ হাজার ৮৭৮ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রার্থী বিএনপির রিটা রহমান পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৪৭ ভোট। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সাংসদ এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার পেয়েছেন ১৪ হাজার ৯৪৮ ভোট। রিটার্নিং কর্মকর্তা সাহাতাব উদ্দিন ফলাফল ঘোষণা করেন। আজ সকাল নয়টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত এ ভোটগ্রহণ চলে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে রেজাউল করিম মনোনয়নপত্র জমা দিলেও পরে মহাজোটের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। মূলত এরপর থেকেই এই আসনে নির্বাচনী উত্তাপ অনেকটা হারিয়ে যায়। এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রার্থী পছন্দ না হওয়ায় দলের একটি বিরাট অংশ নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে না থাকা, সেই সঙ্গে বিএনপির স্থানীয় প্রার্থীর দাবি তোলা হলেও শেষ পর্যন্ত তা না হওয়াও এর একটি কারণ। সবশেষে হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গা পূজার মধ্যে ভোটগ্রহণ সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভোটারদের অনাগ্রহের কারণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
এত কম ভোট পড়া প্রসঙ্গে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এবার মানুষ চেয়েছিল আওয়ামী লীগের প্রার্থী। সেটি হয়নি। তারপরও জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়ে দলের মধ্যে স্থবিরতা কাজ করেছে। সেই সঙ্গে দুর্গাপূজার মধ্যে নির্বাচন হওয়ায় ভোটারদের আগ্রহ অনেক কমে যায়।
জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ গত ১৪ জুলাই মারা যাওয়ায় আসনটি শূন্য হয়। ১ সেপ্টেম্বর এই আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৫২ দশমিক ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছিল। জাতীয় পার্টির এইচ এম এরশাদ ভোট পান ১ লাখ ৪২ হাজার। বিএনপির প্রার্থী রিটা রহমানের ভোট ছিল ৫৩ হাজার। কিন্তু এরশাদের শূন্য আসনে এসে ভোট পড়ে গড়ে মাত্র ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে এই কয়েক মাসের ব্যবধানে মানুষের অনাগ্রহে ৩১ শতাংশ ভোট কম পড়েছে।
এবারের এই উপনির্বাচনে ভোটারদের এত কম উপস্থিতি প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভোট দিতে গেলাম, না গেলাম তাতে কিছু আসে যায় না। যা ফল হওয়ার তাই হবে। নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থার ওপর আস্থাহীনতার কারণে এমনটিই হয়েছে।’
আজ সকাল নয়টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত অন্তত ১৫টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারের তেমন উপস্থিতি নেই। নগর এলাকার ২৫টি ওয়ার্ড ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনের ১৭৫টি কেন্দ্রের সব কটিতে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে দিনভর একজন-দুজন করে ভোটার এসে ভোট দিয়েছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকদের দেখা যায়নি। বিএনপির নেতা-কর্মীদের ভোটকেন্দ্র ও এর আশপাশেও দেখা যায়নি। এমনকি জাতীয় পার্টির লোকজনদেরও উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়েনি। যারা রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন, এমন ব্যক্তিরাই ভোট দিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকেরই ইভিএমে ভোট দেওয়ার আগ্রহ ছিল অনেকের মধ্যে।