বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ৮ নম্বর আসামি নাজমুল হাসান হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেছেন।

মামলার চার্জশিটভুক্ত ৬ কিশোর আসামির মধ্যে নাজমুল হাসান একজন। আজ বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এ. কে. এম. আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি এস. এম. মজিবুর রহমানের বেঞ্চে এ আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আইনজীবী মো. ছগির হোসেন। এর আগে বরগুনায় গত ১৫ অক্টোবর আসামি নাজমুল হাসানের জামিন আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। এই আদেশের বিরুদ্ধে জামিন চেয়ে গত ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টে আবেদন করেন তার আইনজীবী।

আবেদনের বিষয়ে আজ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য কার্যতালিকায় (কজলিস্টে) রয়েছে বলে জানান তার আইনজীবী মো. ছগির হোসেন। তিনি বলেন, আসামি স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার বয়স ১৪ বছর। সে শিশু। এসব যুক্তিতে জামিন আবেদনটি করা হয়।

এর আগে ৫ জুলাই স্কুলে যাওয়ার পথে সকাল ৮য় ওই কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। বর্তমানে সে যশোর শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে রয়েছে।

গত ১ সেপ্টেম্বর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করা হয়।

গত ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেয়ার পর মারা যান রিফাত। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে গত ১৬ জুলাই রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে পাঁচদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। দুদিন পরে মিন্নিকে আদালতে হাজির করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়।

২৬ জুন স্ত্রী মিন্নির সামনে স্বামী রিফাতকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল।

১৬ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বরগুনার মাইঠা এলাকার বাবার বাসা থেকে মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তার বক্তব্য রেকর্ড করতে বরগুনা পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যায় পুলিশ। দীর্ঘ ১০ ঘণ্টার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত ৯টায় মিন্নিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পরদিন মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত মিন্নির পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করেন আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী।

এর পরদিন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যার পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

এর পরদিন বিকেলে মিন্নি একই আদালতে তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এরপর মিন্নির জামিন কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে গত ২০ আগস্ট রুল জারি করেছিলেন আদালত। এর আগে গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করে আদেশ দেন। তার আগে গত ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর মিন্নির জামিনের বিষয়টি হাইকোর্টে আসে।

এরপর গত ২৯ আগস্ট আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে দুই শর্তে জামিন মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট। যে দুই শর্তে মিন্নিকে জামিন দেয়া হয়েছে তা হলো- মিন্নি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না ও তাকে তার বাবার জিম্মায় থাকতে হবে।