অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনকারীদের ধরতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান এ চিঠি পাঠান।

চিঠিতে বলা হয়, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি, ঘুষ, সরকারি অর্থ আত্মসাত ও অবৈধ সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত অনুসন্ধান মামলা চলমান রয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের চলমান অনুসন্ধান ও মামলাগুলোর কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য জব্দকৃত হিসাবগুলোর বিবরণীসহ প্রকৃত অর্থ লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করা আবশ্যক। দুদকের সুষ্ঠু অনুসন্ধান ও তদন্তের স্বার্থে জব্দ করা ওই চার শতাধিক ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব বিবরণী ও প্রকৃত আর্থিক লেনদেনের তথ্য জরুরি ভিত্তিতে সরবরাহ করার জন্য চিঠিতে অনুরোধ জানানো হয়।

গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনো ও জুয়াবিরোধী অভিযানে যুবলীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা আটক হন। এ শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর বিতর্কিত ব্যক্তির সম্পদের খোঁজে নামে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিএফআইইউ, দুদক ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এরই মধ্যে বিএফআইইউ চার শতাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে। বিষয়টি জানার পরই বিএফআইইউর মহাব্যবস্থাপককে ওই চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য।

ব্যাংক হিসাব জব্দের তালিকায় রয়েছেন সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন, নজরুল ইসলাম বাবু, হুইপ শামসুল হক চৌধুরী ও মোয়াজ্জেম হোসেন, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, তার স্ত্রী ও তিন ছেলে, অনলাইন ক্যাসিনো সম্রাট সেলিম প্রধান, ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট, ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদ, তারিকুজ্জামান রাজীব ও হাবিবুর রহমান, যুবলীগের জিকে শামীম, খালেদ মাহমুদ ভূঁঁইয়া, কৃষক লীগ নেতা কলাবাগান ক্লাবের সভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজ, কেন্দ্রীয় যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান আনিস, যুবলীগ দক্ষিণের সহসভাপতি এনামুল হক আরমান, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের আবুল কালাম, মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁঁইয়া, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওছার, তার স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, তার স্ত্রী ও দুটি প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক মাসুদুর রহমান, তার স্ত্রী ও তাদের প্রতিষ্ঠান; যুবলীগ নেতা মুরসালিক আহমেদ, তার বাবা-মা ও স্ত্রী, আজিজ মোহাম্মদ ভাই, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার, গণপূর্ত অধিদপ্তরের সাবেক প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাই ও তার স্ত্রী, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সী ও তার স্ত্রী, বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী উৎপল কুমার দে, নির্বাহী প্রকৌশলী ফজলুল হক, শওকত উল্লাহ, প্রকৌশলী স্বপন চাকমা, রোকন উদ্দিন, আবদুল কাদের চৌধুরী, আফসার উদ্দিন, আবদুল মোমেন চৌধুরী, ইলিয়াস আহমেদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রধান মুমিতুর রহমান এবং গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাজ্জাদুল ইসলাম।

শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো কারবারি, টেন্ডারবাজ, অবৈধ সম্পদ অর্জনকারী, মানিলন্ডারিং এবং ঘুষ-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। এ জন্য পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। বর্তমানে দুদকে ১০০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৫ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। দুদক থেকে ২৩ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। গতকাল আরও ১১ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।