রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন চালাতো ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। অধিকাংশ সময়ই চাঁদা আদায়ে নেয়া হতো টর্চার সেলে। ছাত্রলীগের অপকর্ম চলছিল অনেকটা প্রকাশ্যেই। এ নিয়ে শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থীরা মুখ খোলার সাহস পাননি। অনেকটা নীরবেই ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতাকর্মীদের হাতে হেনস্তার শিকার হচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা।
গতকাল রোববার বিকেলে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের তদন্ত কমিটি এ টর্চার সেলের সন্ধান পায়। পলিটেকনিকের পুকুরের পশ্চিম পাশের ভবনের ১১১৯ নম্বর কক্ষে এ টর্চার সেল থেকে লোহার রড, পাইপ ও লাঠি উদ্ধার করা হয়। পরে সেগুলো জব্দ করেছে পুলিশ।
গত শনিবার দুপুরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত এবং পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনা তদন্তে এসেছিল ওই কমিটি। এ সময় তদন্ত কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। সিসিটিভির ফুটেজও দেখেন কমিটির সদস্যরা। এ সময় তদন্ত কমিটির কাছে কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র জানান, ওই টর্চার সেলটি ছাত্রলীগের।
অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত এবং পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশাসন) স্বাক্ষরিত এক পত্রে কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের আরেক পরিচালক (পিআইডব্লিউ) এসএম ফেরদৌস আলমকে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এ ছাড়া কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরিচালক (কারিকুলাম) ড. নুরুল ইসলাম এবং রাজশাহী মহিলা পলিকেনিটক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ওমর ফারুককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক এসএম ফেরদৌস আলম বলেন, রোববার সকালে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিকেলে আমরা দুইজন ঢাকা থেকে বিমানে রাজশাহী এসেছি। আর কমিটির অপর সদস্য রাজশাহীতে ছিলেন। রাজশাহী পৌঁছেই আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তদন্ত করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
টর্চার সেল নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ফেরদৌস আলম বলেন, সব বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। অধ্যক্ষ, শিক্ষক ও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলছি। পরিপূর্ণ তদন্তের পরই কারিগরি শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক রওনক মাহমুদের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
এ দিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, টর্চার সেলের ওই কক্ষটিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ধরে এনে রড ও লাঠি দিয়ে নির্যাতন করা হতো। এখানে ফ্রি স্টাইলে মারধর চলতো। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কোনো বিষয়ে কথা বললে বা তাদের কোনো অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করলেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন।
তদন্ত কমিটির সামনে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নূর উল্লাহ জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে একটি নির্দিষ্ট চত্বরে বসে এবং বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের প্রায়ই মারধর করে। এর আগে এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের প্রতিবাদ করায় তার পরও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে বাধা দিলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শিক্ষকদের চেয়ার তুলে মারতে আসে।
অধ্যক্ষ বলেন, ওই কক্ষটি জোর করে নিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা ব্যবহার করে। সেখানে বসে তারা বিভিন্ন সময় আড্ডা বা মিটিং করে। তবে শুনেছি তারা ওই কক্ষটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহার করত। তবে এ নিয়ে কেউ কোনোদিন আমার কাছে অভিযোগ করেনি।