নিউজ ডেক্স

আগামী ৩০ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন রেখে রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি নেতা কর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনি আমেজ।

বিএনপির দুই মেয়র প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী বাছাই করতে দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। তাই কে পাচ্ছেন নৌকার মনোনয়ন তা নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। তবে বিভিন্ন হিসাব-নিকাশ আর সাফল্য-ব্যর্থতার মানদণ্ডে উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামকে প্রার্থী অপরিবর্তিত রেখে দক্ষিণে নতুন মুখ দিতে পারে আওয়ামী লীগ। সে ক্ষেত্রে দক্ষিণের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এবং বর্তমান আইন সম্পাদক লিগ্যাল এইড এডুকেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু ,ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বুধবার দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে।

বর্তমানে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের দায়িত্ব পালন করছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র। আগামী নির্বাচনেও মেয়র পদে জয়ের ধারাবাহিকতা রাখতে কৌশল প্রণয়নে ব্যস্ত দলটি। কার হাতে তুলে দেওয়া হবে নৌকাপ্রতীক তা ঠিক করতে আগামী শনিবার বৈঠকে বসছেন দলটির স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের নেতারা। দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বুধবার থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ শুরু করেছেন। আগ্রহীরা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নের আবেদনপত্র সংগ্রহ করে আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৫টা পর্যন্ত জমা দিতে পারবেন।

২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশন নির্বাচনে উত্তরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন আনিসুল হক আর দক্ষিণে সাঈদ খোকন। ওই নির্বাচনে দুজনেই জয়ী হন। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর মেয়র আনিসুল হক ইন্তেকাল করায় মেয়র পদটি শূন্য হয়। এরপর চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি উত্তর সিটির উপনির্বাচনে মেয়র হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। আবারও সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে সরব প্রার্থীদের পাশাপাশি নেতাকর্মীরা। মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে প্রার্থীরা এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করেছেন। রাজধানীর বিভিন্ন দেওয়ালে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের পোস্টার লাগিয়ে নিজেকে প্রচার করছেন। প্রচারণা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।

দলীয় নেতাকর্মীদের ধারণা নৌকার মনোনয়ন যারাই পাবেন, তারাই হবেন ঢাকার দুই সিটির মেয়র। তাই মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকাপ্রতীক কারা পাচ্ছেন তা নিয়ে দলীয় নেতা কর্মীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক মহলেও আগ্রহ অনেকটা বেশি।

জানা গেছে, দুই সিটিতে বেশ কিছু বিকল্প প্রার্থীও রয়েছে আওয়ামী লীগের। বিষয়টি নিয়ে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার হোমওয়ার্ক রয়েছে। তবে মেয়র প্রার্থীর ক্ষেত্রে সমর্থন অপরিবির্তত থাকবে, নাকি নতুন কাউকে আনা হবে সেটি বিভিন্ন মানদণ্ডে বিবেচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। দলীয় সূত্র বলছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আতিকুল ইসলামকে পুনরায় মনোনয়ন দেওয়ার সম্ভবনা বেশি। মাত্র দশ মাসে কাজের সাফল্য-ব্যর্থতা বিবেচনা করা কঠিন। তারপরও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে তার আগ্রহ ও তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়ার ইচ্ছাকে মূল্যায়ন করা হতে পারে। সে জন্য তাকে আরেকবার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে দলের অনেকে।

অন্যদিকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পরিবর্তন আনার পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতারা। দায়িত্ব পালনে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে না পারার অভিযোগ রয়েছে সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রায়শই ট্রল হওয়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে তার ব্যর্থতাকে ইঙ্গিত করে বলে মনে করা হচ্ছে। গত কয়েক বছরে ড্রেনেজ ব্যবস্থা, পানি নিষ্কাশন সমস্যার সমাধান না হওয়াসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে তার ওপর বিরক্ত নগরবাসী। এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে খুব বেশি সমালোচনায় ছিলেন তিনি।

এ ছাড়াও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ইতিবাচক আলোচনার চেয়ে সমালোচনায় বেশি ছিলেন সাঈদ খোকন। প্রার্থী বাছাইয়ে এবার আওয়ামী লীগ পারিবারিক যোগ্যতার চেয়ে প্রার্থীর নিজ যোগ্যতাকে বেশি প্রাধান্য দেবে। এসব বিবেচনায় নতুন কাউকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে খুঁজছে আওয়ামী লীগ।

ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে বেশ কয়েকজনের নাম শোনা গেলেও নব নির্বাচিত আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজিবুল্লাহ হিরু ও ঢাকা ১০ আসনের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন জানা গেছে। এ ছাড়া বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন, দলের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন।


ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে দুই সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস ও হাজি মো. সেলিমের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম আবার নৌকার প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।

প্রথম দিনে মোট আটজন প্রার্থীর জন্য মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে বলে জানান এই কাজে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের কর্মচারীরা। ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপসের পক্ষে মনোনয়ন ফরম কেনেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুর্শেদ কামাল।

ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিমের জন্য মনোনয়ন ফরম তোলেন তার ব্য‌ক্তিগত কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহ‌মেদ বেলাল। ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী থেকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক মহাসচিব এমএ রশিদ ও মো. নাজমুল হক নামে দুজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দক্ষিণে সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনের নাম শোনা যাচ্ছে।

উত্তরের বর্তমান মেয়র আতিকের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম কেনেন তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন ইমন। উত্তরে মেয়র পদে নির্বাচনে আগ্রহী বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নেতা শহীদ উল্লাহ উসমানী, ভাষানটেক থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেজর (অব.) মো. ইয়াদ আলী ফকির ও শহীদ পরিবারের সন্তান অধ্যাপক মো. জামান ভূঁইয়া মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের এছাড়াও পরিবর্তন হলে, প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর পরিচালক ,জয়যাত্রা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং নারী উদ্যোক্তা, সমাজকর্মী সিস্টার হেলেনা জাহাঙ্গীর এবং প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের স্ত্রী রুবানা হকও রয়েছেন আলোচনায়।

আগামী ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন রোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি চূড়ান্ত হতে পারে বলে দলীয় সূত্র বলছে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘সার্বিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী ঠিক করা হবে। এ বিষয়ে দলে আলোচনা হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী মেয়র নির্বাচনেও তিনি সঠিক প্রার্থী দেবেন।’

আগামী ৩০ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে ইভিএমের পাহারায় দুজন করে সেনা কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। প্রার্থী হতে হলে বর্তমান মেয়রদের পদত্যাগ করতে হবে। তবে কাউন্সিলররা নিজ পদে থেকেই নির্বাচন করতে পারবেন। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ৩১ ডিসেম্বর। ২ জানুয়ারি এসব মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৯ জানুয়ারি।

একক প্রার্থী দিচ্ছে জাপা
এদিকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি একক প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। বুধবার সকালে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ইতোপূর্বে বেশ কয়েকটি নির্বাচন আমরা সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েই করেছি। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি একক প্রার্থীই দিচ্ছে।

জাতীয় পার্টিও মেয়র ও কাউন্সিলর পদে বুধবার থেকে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করেছে। এদিন জাপার বনানী কার্যালয় থেকে কাউন্সিলর পদে অর্ধশত ফরমও বিতরণ করা হয়। জাতীয় পার্টি থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মনোনয়ন ফরম নেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল ইসলাম। আগের দিন মঙ্গলবার সাবেক এই সেনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে শতাধিক অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। তিনি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যপদ পেয়েছেন বলে জানান জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি খন্দকার দেলোয়ার জালালী।

জিএম কাদের বলেন, আমরা আশা করছি, এবারের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা আগের চেয়ে অনেক ভালো ফল করবে। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ মনোনয়নপত্র নিতে আসা নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, প্রতিটি কাউন্সিলর পদে যেন জাতীয় পার্টির একাধিক প্রার্থী না থাকে। একাধিক প্রার্থী হলে ঘরের শত্রু বিভীষণ অবস্থা হতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়ন ফরম বিতরণ করবে জাতীয় পার্টি। মনোনয়নপত্র বিক্রি শেষ হলে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়ে চূড়ান্ত মনোনয়ন ঘোষণা করবে দলটি।