পদ্মা সেতুতে এখন চলছে অটোরিকশা! আজব শোনালেও সরজমিনে গিয়ে এমনটিই দেখা গেছে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে। কাজও এগিয়ে চলেছে দ্রুততার সাথে। স্প্যানের সাথে সাথে একর পর এক বসছে রোডওয়ে ও রেলওয়ে স্ল্যাব।

৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিমুলিয়া ঘাট থেকে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের উদ্দেশ্যে আমরা স্পিডবোট করে রওনা দিই। যেতে যেতে দেখছিলাম পদ্মার বুকে সারি সারি দাঁড়িয়ে আছে পিলার এবং ভারী ভারী ভাসমান ক্রেন ও যন্ত্রপাতি। আবার মাঝে মাঝে একটু ফাঁকা রেখে এসব পিলারের ওপর বসেছে স্প্যান। এক একটি স্প্যান বা পিলার থেকে পিলারের দূরত্ব ১৫০ মিটার। 

শীতের সকালে মনোরম লাগছিল এসব দৃশ্য। আগে থেকে আমাদের সাথে ছিলেন সেতু কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা। তিনি জাজিরা প্রান্ত থেকে আমাদের নিয়ে গেলেন সেতুর ওপরে। আমরা স্প্যানের উপর উঠি। ভূমি থেকে প্রায় ১২ তলা ভবনের সমান এর উচ্চতা। আমরা প্রথমে স্প্যানের মাঝের বা ভিতরের অংশে গেলাম। সিড়ি বেয়ে ৬ তলা ভবনের সম উচ্চতায় উঠতে সকলেই একটু হাফিয়ে উঠলাম। এসময় দেখা গেলো স্প্যানের ভেতর রেলওয়ে স্ল্যাব বসে গেছে অনেক দূর। এ সকল স্ল্যাবের ওপর বসবে রেল লাইন। রেলওয়ে স্ল্যাব দেখার পর আমরা চলে গেলাম একবারে ওপরে, যেখান দিয়ে গাড়ি চলবে। আরো ৬ তলা সমান সিড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে হলো। এখন আমরা ১২ তলা ভবন সমউচ্চতার পদ্মা সেতুর রোডওয়ে স্ল্যাবের ওপর।

সেখানে উঠে আমরা আরো বিস্মিত। সেতুর ওপরে রাস্তার কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। শুধু কি তাই! সেতুর ওপর চলছে গাড়ি ও অটোরিকশা। একটি অটোরিকশার চালক সেজেই বসে পড়লাম। তোলা হলো ছবি ও ভিডিও। তবে এসব গাড়ি ও অটোরিকশা কাজের প্রয়োজনেই সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেতুর উপরে মালামাল বহন ও দ্রুততার সাথে কর্মকর্তাদের এ মাথা থেকে ওমাথায় যাওয়ার জন্যই এই অটোরিকশা নেয়া হয়েছে সেখানে। 
একসময় নেমে আসি। আবারো স্পিডবোটে করে ছোটা। এবার লক্ষ্য শিমুলিয়া ঘাট। পথে আমাদের স্পিডবোট গিয়ে লাগলো মাওয়ার কাছের কনস্ট্রাকশন ফেব্রিকেশন ইয়ার্ডে। যেখানে তৈরি হয়েছে বড় বড় পাইল এবং জোড়া লাগানো হয়েছে চীন থেকে আসা খণ্ড খণ্ড স্প্যান। এখানেই আবার রং করা হচ্ছে এসব স্প্যান। 

ঘুরে ঘুরে দেখা গেলো, বিশাল কর্মযজ্ঞ হচ্ছে সেখানে। কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের সাথেই সেখতে পেলাম বিশাল আকৃতির দুটি বার্জ। আর এ বার্জে রয়েছে খণ্ড খণ্ড স্প্যান। জানলাম, এগুলো ওই দিনই এসেছে চীন থেকে। এগুলো জাহাজ থেকে খালাস করে নেয়া হবে ওয়ার্কশপে জোড়া লাগাতে। দেখতে দেখতেই স্পিডবোডের গতি বেড়ে গেলে। মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই আমরা চলে এলাম শিমুলিয়া ঘাটে। তারপর সেখানে একটি রেস্টেুরেন্টে পদ্মা ইলিশ ভাজা দিয়ে সবাই দুপুরের খাবার খেলাম। খেতে খেতে সফর সঙ্গীদের অনেকেই প্রধানমন্ত্রীর সাহস ও কাজের ভূয়সী প্রসংশা করলেন। বললেন, একমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যা বলেই সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পদ্মা সেতুকে তিনি বাস্তবে রূপ দিতে পারছেন!