কারাবন্দি খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশে তাঁর চিকিৎসার জন্য প্যারোলের (শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি) আবেদন করা হলে সরকার তা বিবেচনা করবে। আদালত অথবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যথাযথ কারণ দেখিয়ে এই আবেদন করতে হবে। বিএনপি নেত্রীর অসুস্থতার দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে। এতে রাজনৈতিকভাবে সরকার লাভবান হবে বলেও মনে করা হচ্ছে।
সরকারের নীতিনির্ধারকদের মতে, খালেদা জিয়া প্যারোল নিলে সরকারের কাছে বিএনপির নতজানু হওয়া প্রমাণিত হবে এবং বিএনপি নেত্রীর ভবিষ্যৎ শারীরিক অবস্থার দায় সরকারের ঘাড়ে চাপবে না। সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক কালের কণ্ঠকে সরকারের এই মনোভাব জানিয়েছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এরই মধ্যে তাঁর দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ করেছেন। গত শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপির মহাসচিব তাঁকে ফোন করে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপ করতে অনুরোধ করেছেন। তবে বিএনপি এ ক্ষেত্রে কোনো লিখিত চিঠি দেয়নি বলেও জানান তিনি।
পরে এ বিষয়ে গত রবিবার ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে। আবেদনের যৌক্তিকতা দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য গতকাল সোমবার কালের কণ্ঠকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে বিএনপির মহাসচিবের ফোনের বিষয়ে বিস্তারিত জেনেছেন। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখছে এবং এ ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার পরিবার ও বিএনপিকে যথাযথ আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণের জন্য মত দিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কালের কণ্ঠকে বলেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার প্যারোলের আবেদনটি দলীয় ও সরকারের সর্বোচ্চ ফোরামের আলোচনায় ইতিবাচক হিসেবে স্থান পেয়েছে। এতে সরকার দুই দিক থেকে লাভবান হবে বলে তারা মনে করছে। ফোরামের আলোচনায় নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে বিএনপি যেসব অভিযোগ করছে, তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্যারোল মঞ্জুর করা হলে তা আর করতে পারবে না। আর প্যারোলে মুক্তি নেওয়ার অর্থই হচ্ছে সরকারের কাছে বিএনপির নতজানু হওয়া।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বজনরা চিকিৎসকদের কাছে আবেদন করেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে চিকিৎসকরা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। তাঁরা যদি প্যারোলে মুক্তি চান, তাহলে আদালতে আবেদন করতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও আবেদন করতে পারেন। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) প্যারোলের জন্য আবেদন করলে কী কী কারণে প্যারোল চায়, তা উল্লেখ করতে হবে। সেটি নিয়মের মধ্যে পড়ে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম কালের কণ্ঠকে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি পেতে হলে আদালতের মাধ্যমেই পেতে হবে এবং সেটি আইনানুগ প্রক্রিয়ায় হতে হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গত শনিবার ময়মনসিংহের ভালুকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি চেয়ে প্যারোলের আবেদন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে আন্তরিক থাকবেন।’
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য দুটি পথ খোলা আছে। একটি হলো তাঁকে আইনি প্রক্রিয়ায় লড়াই করে জামিন নিতে হবে। অন্যটি হলো প্যারোলের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা গুরুতর বলে স্বজন ও বিএনপি নেতারা দাবি করছেন। তিনি একা চলাচল করতে পারেন না, সাহায্য ছাড়া খেতে পারেন না বলেও দাবি স্বজনদের। গত সপ্তাহে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের দিন স্বজনদের পক্ষ থেকে তাঁর মুক্তির বিষয়টি ‘মানবিক’ দিক থেকে বিবেচনার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্যারোলের জন্য এটি যথাযথ প্রক্রিয়া নয়।