কক্সবাজার জেলায় জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রথম ধাপে নির্মিত ২০টি ভবনের উদ্বোধন করেছেন তিনি।
১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে বাস্তুহারা হয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরের পাশের এলাকায় সরকারি খাস জমিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ৬০০ পরিবারের প্রায় তিন দশকের উদ্বাস্তু জীবনের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার। বস্তির খুপরি ঘর ছেড়ে তারা পাচ্ছেন আধুনিক সুবিধা সম্বলিত ফ্ল্যাট।
নামমাত্র মূল্যে বছরের পর বছর কষ্টে থাকা উদ্বাস্তুদের এসব ফ্ল্যাট দেয়া হচ্ছে। প্রথম ধাপে ৬০০ পরিবারকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ফ্ল্যাট হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পর্যায়ক্রমে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্পে। ১ হাজার ১ টাকার নামমাত্র মূল্যে এসব ফ্ল্যাট দেয়া হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে প্রথম পর্যায়ে নির্মিত হয়েছে ৫ তলার ১৯টি ভবন। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ১৩৯টি ভবন নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা থাকবে। প্রতিটি ভবনে থাকবে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল।
প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন জানান, প্রকল্প এলাকায় ১৪টি খেলার মাঠ, সবুজ জায়গা, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দুটি জেটি, দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে।
এছাড়াও থাকবে ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু, পুকুর ও খাল।
প্রকল্প পরিচালক আরো জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা ফ্ল্যাট পাবেন তাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা হবে। প্রকল্প এলাকায় একটি শুঁটকি মহালও থাকবে এবং এখানে পর্যায়ক্রমে বিক্রয় কেন্দ্র ও প্যাকেজিং শিল্পও গড়ে তোলা হবে। ২০২৩ সালে পুরো প্রকল্পের যখন শেষ হবে, তখন এখানে যে কেবল ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার আশ্রয় পাবে, তা নয়। প্রায় ১০০ একর জমির ওপর গড়ে তোলা হবে আধুনিক পর্যটন জোন।
ভবনগুলোর নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রেখেছেন। ভবনগুলো হলো—দোঁলনচাপা, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালী, নীলাম্বরী, কেওড়া, ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, বাঁকখালী, ইনানী ও সাম্পান।