মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করতে সর্বমহল থেকে মুসল্লিদের অনুরোধ জানানো হয়। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের ভেতরে সামাজিক দূরত্ব মানা হলেও বাইরের দৃশ্য একেবারে ভিন্ন। একজন আরেকজনের গাঁয়ের ওপর উঠে আসছে। সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই সেখানে।

সোমবার (২৫ মে) এমনই চিত্র দেখা যায় বায়তুল মোকাররম মসজিদের সবগুলো প্রবেশ গেটে। সবচেয়ে বেশি সামাজিক দূরত্ব না মানার প্রবণতা দেখা গেছে পূর্ব গেটে। সেখানে হাজার হাজার মানুষের ঢল দেখা গেছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররমে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে সকাল ৭ টায়, দ্বিতীয় জামাত ৮টায়, তৃতীয় জামাত ৯টা, ৪র্থ জামাত ১০টায় এবং সর্বশেষ ৫ম জামাত অনুষ্ঠিত হয় পৌনে ১১টায়।

ঈদের নামাজ পড়তে সকাল ৬টা থেকে মুসল্লিদের মসজিদে প্রবেশের জন্য সবগুলো গেট খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে মুসল্লিরা মসজিদে প্রবেশ শুরু করেন। মসজিদে হাত ধোয়া, জীবাণুনাশক কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম জামাতের আগে মসজিদে প্রবেশে তেমন লাইনের চিত্র দেখা যায়নি। তবে পরে ধীরে ধীরে মুসল্লিদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর লাইনও দীর্ঘ হতে থাকে। তখন মুসল্লিদের মধ্যে সামাজিক দূরত্বের চিত্র পরিলক্ষিত হয়নি। ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। তারপরও অনেকের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার প্রবণতা দেখা যায়নি।

দ্বিতীয় এবং ঈদের জামাতের আগে সবচেয়ে বেশি সামাজিক দূরত্ব না মানার চিত্র দেখা গেছে। তবে মসজিদের ভেতর সামাজিক দূরত্ব মেনেই মুসল্লিরা নামাজ আদায় করছেন। নামাজের আগে ও পরে বারবার সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান ইমাম সাহেবরা।

মুসল্লিদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে মসজিদের ভেতরে এবং বাইরে স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা উপস্থিত মুসল্লিদের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার অনুরোধ করেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। যার যার ইচ্ছেমত একজন আরেকজনের খুব কাছে এসেই দাঁড়াচ্ছেন। এ দৃশ্য দেখে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ কমিটির পরিচালক মহিউদ্দিন মজুমদার নিজেই নেমে পড়েন মুসল্লিদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টায়। করজোর করে মিনতি করেন সবাইকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে। কমপক্ষে এক ফুট হলেও দূরে দাঁড়াতে অনুরোধ করেন তিনি। তারপরও অনেকেই তার কথা শোনেননি। পরবর্তীকে কিছুটা মেজাজও হারান তিনি। এরপর আবার অনুরোধ করেন, অন্তত পরিবারের কথা চিন্তা করে হলেও আপনার নিজেদের সুরক্ষিত রাখুন, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন।

মহিউদ্দিন মজুমদার বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার। মুসল্লিদেরও তো নিজেদের থেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু তারা কোনোমতে সামাজিক দূরত্ব মানছেনই না। নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করছেন।

নামাজ পড়তে আসা ওহিদুল ইসলাম নামে একজন বলেন, সামাজিক দূলত্ব মেনে চলার চেষ্টা করছি। সবারই মেনে চলা উচিত। কিন্তু অনেকেই মানেন না। আবার আমরা মানতে চাইলেও অন্যদের জন্য সেটা পারছি না। তারা একজন আরেকজনের সঙ্গে ঘেঁষে ঘেঁষে দাঁড়াচ্ছেন।

এদিকে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক রয়েছে।