সোহেল রানা, মালয়েশিয়া প্রতিনিধি

মালয়েশিয়ায় গত কালকে আটক করা ২৬৯ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ ফেরত পাঠানো হবে, বললেন মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব।

আটক আড়াইশর বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে বলে মন্তব্য করেছেন মালয়েশিয়ার নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব।

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, “রোহিঙ্গারা আমাদের নাগরিক নয়, এ কারণে আমাদের বাধ্যবাধকতা নাই। তারা যেখানে আছে, সেখানকার সরকার যা ইচ্ছা করুক।”

সাগরপথে মালয়েশিয়ার লঙ্কাভি উপকূলের দিকে যেতে চাওয়া ২৬৯ জন রোহিঙ্গাকে সোমবার সকালে আটক করেছে দেশটির যৌথ টাস্কফোর্স।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে একজনকে মৃত উদ্ধার করা হয়েছে বলে ওই টাস্কফোর্সের বরাতে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার গণমাধ্যম।

মালয়েশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী, মেরিটাইম এনফর্সমেন্ট এজেন্সি (এমএমইএ) এবং পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত ওই টাস্কফোর্স।

টাস্কফোর্সের বিবৃতি উদ্ধৃত করে দেশটির দ্য স্টার পত্রিকা লিখেছে, বাহিনীর একটি জাহাজ অবৈধ অভিবাসীদের দিকে এগোলে তাদের মধ্য থেকে ৫৩ জন পানিতে ঝাঁপ দেয় এবং সাঁতরে উপকূলে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় উপকূলে থাকা এমএমইএ সদস্যরা তাদের আটক করে।

“এরপর ওই নৌকাকে অনুসরণ করে আরও ২১৬ জনের সন্ধান পাওয়া যায়। এ সময় একজন নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।”

আটক ওই ২৬৯ জন রোহিঙ্গাকে লঙ্কাভি এলাকার একটি বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে মালয়েশিয়ার টাস্কফোর্স।

পরে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসমাইল সাবরি বলেন, “তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা যেন এটা না ভাবে যে, এখানে পালিয়ে আসলেই তাদের রেখে দেওয়া হবে।”

রোহিঙ্গাদের কোনোভাবে রাখা হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “এই শরণার্থীদের কক্সবাজারে কিংবা ভাসানচরে পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।”

তার এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ক্লাইমেট ভালনারেবিলিটি ফোরামের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন।

রোহিঙ্গাদের দায়-দায়িত্ব অন্য দেশকেও নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমরা আগে থেকে বলে আসছি, যারা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে ভাবেন এবং তাদেরকে ভালো রাখতে চান তারা এদেরকে নিতে পারেন। যারা সেসব দেশে গিয়ে ওই দেশের সদস্য হিসেবে অবদান রাখতে পারে।”

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আসতে থাকে রোহিঙ্গারা; এই সংখ্যা কয়েক মাসের মধ্যে সাত লাখ ছাড়ায়। আগে থেকে বাংলাদেশে অবস্থান করছিল আরও চার লাখ রোহিঙ্গা।

তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নিয়ে জরুরি মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার।

এর মধ্যে সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে পূর্ব-এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যেতে চাওয়া রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছে অনেকবার। সাগরে ভাসার সময় এসব শরণার্থীর কষ্টগাথা ফুটে ওঠার পর তাদেরকে আশ্রয় দিতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানায় বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে মিয়ানমারের ওপর চাপ না বাড়িয়ে উল্টো বাংলাদেশের ওপর দায়িত্ব বর্তানোর সমালোচনা করে আসছে সরকার। আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমা থাকা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে অন্য দেশগুলোর ‍প্রতিও আহ্বান জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ দুই দফায় সাগরে ভাসতে থাকা তিন শতাধিক রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে ভাসানচরে পাঠিয়েছে সরকার।