মোঃ খাইরুল ইসলাম, ভান্ডারিয়া প্রতিনিধি।
পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় উপজেলায় ধাওয়া ইউনিয়নের সোহরাফ হোসেন হাওলাদার (৬০) নামে এক বৃদ্ধের করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু ঘটেছে।
গত শনিবার ঢাকা থেকে সর্দি-জ্বর নিয়ে বাড়িতে ফিরে রবিবার দিনগত রাতে নিজ বাড়িতে মারা যান। করোনা উপসর্গে মৃত্যুর ভয়ে পরিবারের স্বজনরা তার লাশ ঘরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। পরে উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে রাতেই ওই বৃদ্ধেও লাশ দাফন করে। লাশের গোসল ও জানাজা পড়ান উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম।
মৃত সোহরাব হোসেন ঢাকায় সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতেন। সে উপজেলার রাজপাশা গ্রামের মৃত আব্দুল গফ্ফার হাওলাদারের ছেলে, তিন সন্তানের জনক।
হাসপাতাল ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, রাজপাশা গ্রামের সোহরাফ হোসেন ঢাকা থেকে গত শনিবার সর্দি-জ্বর নিয়ে বাড়িতে আসেন। ওই দিনই সে গুরুতর অসুস্থ বোধ করলে স্বজনরা তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। রবিবার রাতে সে হঠাৎ মৃত্যু বরন করেন। সে করোনা আক্রান্ত এমন সন্দেহে পরিবারের স্বজনরা লাশ ঘরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। সেই সাথে মৃত বৃদ্ধের প্রতিবেশী আপন দুই ভাইও পালিয়ে যায়।
ধাওয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সিদ্দিকুর রহমান টুলু
উপজেলা ও থানা প্রশাসনকে খবর দিলে ইউএনও নাজমুল আলম নবীন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জহিরুল ইসলাম ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলামসহ থানা পুলিশ রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। লাশ উদ্ধার করে মেডিক্যাল টিম করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করে। প্রশাসন পরিবারের স্বজন কাউকে না পেয়ে চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলুর সহায়তায় এক ব্যাক্তিকে দিয়ে ওই বৃদ্ধেও পারিবারিক কবরস্থানে কবর খোঁড়া হয়। পরে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম নিজেই লাশের গোসল ও জানাজার ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন। এভাবে রাত ১২টার দিকে ওই বৃদ্ধের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণের ভয়ে পরিবারের স্বজনরা লাশ ফেলে পালিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন যথাযথ নিয়ম মেনে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করেছে। আমি লাশের গোসল ও জানাজা পড়িয়েছি। কিন্তু দুর্ভাগ্য স্বজনরা কেউ কাছে আসেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জহিরুল ইসলাম, ওই ব্যাক্তি করোনায় আক্রান্ত কি-না তা এখনও আমরা নিশ্চিত নই। তার নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
ভাণ্ডারিয়া উপজেলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকবর্তা নাজমুল আলম নবীন বিষয়টি নিশ্চিত করে বরেন, মৃত ওই ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত কি-না তা নিশ্চিত না। তবে করোনার ভয়ে স্বজনরা তার লাশ ফেলে পালিয়েছেন। এটা দুঃখজনক। খবর পেয়ে প্রশাসন গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গভীর রাতে লাশ দাফন করেছে। তিনি আরো বলেন, প্রশাসন খবর না পেলে আজও হয়তো হতভাগ্য ওই বৃদ্ধের লাশ ঘরে পড়ে থাকতো। কোনো মানুষের জীবনে যেন এমন খারাপ সময় না আসে।