ইসলাম ধর্মের অন্যতম বিশ্বাস হলো, পরকালের জবাবদিহি ও হিসাব-নিকাশ। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে এ বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘মানুষের হিসাব-নিকাশ অতি নিকটে। অথচ তারা উদাসীনতায় মুখ ফিরিয়ে আছে।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১)
অবিশ্বাসীরা কিয়ামত ও পুনরুত্থান বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্থাপন করে মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দেয়। অথচ পুনরুত্থান দিবস কিংবা কিয়ামতকে অস্বীকার করার মতো কোনো যুক্তি-প্রমাণ নেই। ঘুরেফিরে তাদের একটি প্রশ্ন, ‘মানুষ মরে পচে-গলে মাটি হয়ে যাওয়ার পর কিভাবে জীবিত হবে?’
তারা কি ভুলে গেছে যে এই মানুষই আগে মাটি ছিল, আল্লাহ তাআলা তাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?
এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘বলে দাও, তোমরা হয়ে যাও পাথর বা লোহা অথবা এমন কিছু, যা তোমাদের ধারণায় খুবই কঠিন তারা বলবে, কে আমাদের পুনরুত্থিত করবে। বলে দাও, তিনিই, যিনি তোমাদের প্রথমবার সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তারা তোমার সামনে মাথা নাড়বে এবং বলবে, তা কবে? বলো, সম্ভবত তা শিগগিরই হবে।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৪৯-৫১)
হাড়, মাংস ও মাটিতে পরিণত হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক এবং সহজ একটি ব্যাপার। মানুষ যদি মরে লোহা কিংবা পাথরেও পরিণত হয়, তথাপি মহান আল্লাহ মানবদেহের ওপর জীবনের পোশাক পরাতে সক্ষম।
কেননা মানুষের দুটি গন্তব্য রয়েছে। এক. ব্যক্তিগত পরিণতি, যাকে মৃত্যু বলা হয়। দুই. মানুষের সমষ্টিগত পরিণতি, যাকে কিয়ামত বলা হয়। মানুষ মরণশীল—এ নির্মম সত্যকে অদ্যাবধি কেউ চ্যালেঞ্জ করতে পারেনি। অমরত্বের সুধা পান করার অভিলাষ অনেকেই দেখিয়েছে, কেউ সফল হয়নি। কাজেই মৃত্যু মানুষের অনিবার্য নিয়তি ও পরিণতি। মানুষের ব্যক্তিগত মৃত্যুকে যুক্তি ও প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করিয়ে গোটা বিশ্বের ব্যাপক মৃত্যু অর্থাৎ কিয়ামতকে প্রমাণ করা স্বাভাবিক বিষয়। মানুষ একসময় এ পৃথিবীতে ছিল না। পর্যায়ক্রমে বংশপরম্পরায় তারা এ দুনিয়ায় আসে। কালক্রমে তারা নশ্বর এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়। এভাবে মৃত (রক্ত-মাটি) জীবিত হওয়া এবং জীবিত বস্তু মৃত হওয়ার বহু নজির মানুষের সামনে প্রতিনিয়তই হাজির হয়। বিশাল এ পৃথিবী পূর্বদৃষ্টান্ত ছাড়া শূন্য থেকে অস্তিত্বে আনা যে স্রষ্টার কাজ; ধ্বংস হয়ে যাওয়া, ক্ষয়ে যাওয়া মৃত বস্তুকে পুনরায় জীবিত করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়।
পুনরুত্থান দিবস অস্বীকারকারীদের আরেকটি প্রশ্ন হলো, কিয়ামত কবে সংঘটিত হবে? এ বিষয়ে কোরআনের বক্তব্য হলো, কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার সময় সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। কিন্তু কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার সময় সম্পর্কে না জানার মানে এই নয় যে কিয়ামত বলে কিছু নেই। বিষয়টি মৃত্যুর মতো। মানুষ কি জানে সে কখন মারা যাবে? মৃত্যুর সময় জানা না থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে তো কারো কোনো সন্দেহ নেই যে একদিন সে মারা যাবেই! ঠিক তেমনি কিয়ামতের সময় সম্পর্কে মানুষ না জানলেও এটি নিশ্চিত যে একদিন অবশ্যই কিয়ামত কায়েম হবে।
কিয়ামত বিষয়ে আরো একটি প্রশ্ন ওঠে, সেটি হলো পৃথিবীতে এত এত প্রাণী আছে, সেগুলোর হাশর-নশর না হয়ে শুধু মানুষের হাশর-নশর কেন হবে? এ প্রশ্নের জবাব হলো, আসলে কিয়ামতের দিন মানুষসহ সব জীবজন্তু বিচারের মুখোমুখি হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন বন্য পশুদের একত্র করা হবে।’ (সুরা : তাকভির, আয়াত : ৫)
অন্য প্রাণীর মতো চতুষ্পদ জন্তুরও হাশর হবে। এগুলোকেও কিয়ামতের দিন জীবিত করা হবে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণশীল জীব এবং নিজ ডানায় উড়ন্ত পাখি—তারা সবাই তোমাদের মতো একেকটি জাতি। কিতাবে (লাওহে মাহফুজ বা কোরআনে) কোনো কিছুই আমি বাদ দিইনি। অতঃপর তাদের রবের দিকে তাদের একত্র করা হবে।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৩৮)
অন্য আয়াতে এসেছে, ‘তাঁর (আল্লাহর) অন্যতম নিদর্শন আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং এই দুইয়ের মধ্যে তিনি যেসব জীবজন্তু ছড়িয়ে দিয়েছেন সেগুলো। তিনি যখন ইচ্ছা তখনই এগুলোকে সমবেত করতে সক্ষম।’ (সুরা : শুরা, আয়াত : ২৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কিয়ামতের দিন সবার হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করা হবে। এমনকি শিংবাহী ছাগল যদি শিংবিহীন ছাগলকে গুঁতা দিয়ে কষ্ট দিয়ে থাকে, কিয়ামতের দিন শিংবাহী থেকে কিসাস (মৃত্যুদণ্ড) নেওয়া হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৭৪৫)। এসব বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, কিয়ামতের দিন জীবজন্তুরও বিচার হবে।