মোঃ রোমান- ফরিদপুর প্রতিনিধি

একযোগে লাখো কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন সহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ফরিদপুরে মহান বিজয় দিবস পালিত হচ্ছে। বুধবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে মুজিববর্ষ মঞ্চের সামনে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ উপস্থিত থেকে এবং কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে অনলাইনে লক্ষাধীক মানুষ জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, বিজয় দিবস মাসের শুরু থেকে শত সহস্র কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবশেনে অংশ নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন কাজ অনলাইনের মাধ্যমে শুরু হয়। ফরিদপুর জেলার যে কোনো নাগরিক দেশ বা দেশের বাইরে থেকেই এই নিবন্ধনে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিলো।

তিনি বলেন, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০ সকাল ৯টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত নিবন্ধন করেন ১ লক্ষ ২১ হাজারের বেশি মানুষ। কোভিড ১৯ এর কারনে অধিক সংখ্যাক মানুষকে একত্রিত না করে যে যার অবস্থান থেকে ঘড়ির কাটায় ঠিক ৯টা ৩০ মিনিটে শুরু হয় জাতীয় সংগীত।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের মঞ্চে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের শুভ সুচনা করা হয়। এসময় জেলা প্রশাসক অতুল সরকার ও পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বিপিএম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন।

এর আগে সকাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ জড়ো হতে থাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে। এসময় অনেকেই লাল-সবুজের পাঞ্জাবী ও শাড়ী পড়ে হাজির হন।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৈশ্বিক দুর্যোগ করোনা ভাইরাসের এর প্রাদুর্ভাবের কারনে জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের পরিকল্পনায় জেলায় বিজয় দিবস উদযাপনে শত সহস্র কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। এতে অনলাইনের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশনের ব্যবস্থা করে জেলা প্রশাসন। এছাড়া ওয়েবসাইট, ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে দেশে এবং প্রবাসে অবস্থানরত ফরিদপুরের সকল নাগরিককে তাঁর নিজ নিজ অবস্থান থেকে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানায় জেলা প্রশাসন। সেখানে ১৪ই ডিসেম্বরের মধ্যে এক লক্ষ মানুষ রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করেন এবং মহান বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে ১ লক্ষ ২১ হাজার মানুষ রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়।

জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। তিনি বলেন, আজ ১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। বাঙ্গালী জাতির সর্বাধিক গৌরব অর্জনের দিন। বিজয়ের এই দিনে আমি স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী, স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যার দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ লক্ষ ইজ্জত হারানো মা-বোনকে। তিনি এ সময় জাতীয় সংগীত পরিবেশনায় অংশগ্রহণকৃত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপণ করেন। এরপর শান্তির প্রতিক কবুতর ও বেলুন উড়ানো হয়।

সকাল ১১ টায় অনলাইনে জুম অ্যাপের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সবোর্ত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় সমৃদ্ধি অর্জন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের সভাপতিত্বে এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক রায়। আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মোঃ আলিমুজ্জামান বিপিএম, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবল চন্দ্র সাহা, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক প্রফেসর মোঃ শাহজাহান, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোশার্রফ আলী, সরকারি ইয়াছিন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শীলা রানী মন্ডল, সদ্য নির্বাচিত পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের ইংরেজি বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক রেজভী জামান, শিক্ষক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। সন্ধ্যা ৬ টায় অনলাইনে জুম অ্যাপের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষ্যে বাদ যোহর সকল মসজিদে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও গুজব বিরোধী কার্যক্রমের বিষয়ে জনমত সৃষ্টির জন্য আলোচনা ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে আলোচনা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ-আত্মদানকারী-যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিভিন্ন মসজিদে দোয়-মিলাদ মাহফিল ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিকাল ৩ টায় অনলাইনে জুম অ্যাপের মাধ্যমে (আইডিঃ ৩৩৬৩০২৯৯০২, পাসওয়ার্ডঃ ১) মহিলাদের অংশগ্রহণে মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

দিনব্যাপী শেখ রাসেল শিশুপার্কসহ অন্যান্য সকল শিশু পার্কে বিনা টিকিটে শিশুদের জন্য শিশুপার্ক সকাল-সন্ধ্যা উন্মুক্ত রাখা এবং প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ ও গুজব বিরোধী কার্যক্রমের বিষয়ে জনমত সৃষ্টির জন্য আলোচনা ও জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে আলোচনা এবং মুক্তিযুদ্ধে শহীদ-আত্মদানকারী-যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মন্দির গীর্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হচ্ছে। হাসপাতাল, জেলখানা, শান্তিনিবাস, এতিমখানা ও শিশু পরিবারে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে।

এর আগে সকাল আটটায় শহরের গোয়ালচামট এলাকায় মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতিস্তম্ভে জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, প্রেসক্লাব, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্প্যমাল্য অর্পন করা হয়। পরে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের গণকবরে শ্রদ্ধা জানানো হয়।