মোঃ রোমান- ফরিদপুর প্রতিনিধি

আজ ১৭ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে ফরিদপুর জেলা শত্রুমুক্ত হয়। ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের পরেও সেদিন বিজয়ের স্বাদ পায়নি ফরিদপুরবাসী।১৯৭১ এর ২৫ মার্চ কাল রাতের পর দেশের সমস্ত জেলার মত ফরিদপুরেরও শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। নয় মাসের যুদ্ধে সেদিন বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত জেলা শত্রুমুক্ত হলেও ফরিদপুরে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী বিহারিরা তখন পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। ফরিদপুরের উত্তর-পূর্ব কোণ খলিল মণ্ডলের হাট থেকে শুরু করে তালুকের চর হয়ে সিঅ্যান্ডবি ঘাট পর্যন্ত বিভিন্নস্থানে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয় সেদিন।যশোর থেকে ফেরার পথে পাকিস্তানি সেনা ও রাজবাড়ীর বিহারী রাজাকাররা ফরিদপুরের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়। এ সময় পদ্মা নদী দিয়ে ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে স্বাধীনতাকামী মুক্তিসেনারা এবং স্থল পথে ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধা সালাউদ্দিন মোকাররম, আবুল ফয়েজ, নিতি ভূষণ সাহাসহ কয়েকশ’ মুক্তিযোদ্ধা উভয় দিক থেকে হামলা চালায় তাদের ওপর। ওইদিন দুপুরের পর পরাস্ত হয় পাকিস্তানি সেনারা। অবশেষে ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ফরিদপুরে অবস্থানরত পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর যশোর ক্যন্টনমেন্টের রিজিওনাল হেড কোয়াটারের প্রধান ব্রিগেডিয়ার মঞ্জুর জাহানজের আরবার এর কাছে আত্মসর্পণের জন্য বার্তা পাঠায়। তিনি ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করবেন বলে তাদের পক্ষ থেকে জানানো হলে ১৭ ডিসেম্বর চার্লি সেক্টরের অধীনে ঝিনাইদহ, মাগুরা, ফরিদপুর অঞ্চলের মিত্র বাহিনীর অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার ব্রজেন্দ্রনাথ ফরিদপুরে আসেন। স্থানীয় ময়েজ মঞ্জিলে পাকিস্তানি বাহিনীর কর্মকর্তারা সমবেত হন। এসময় পাকিস্তানি ব্রিগেডিয়ার ভারতীয় ব্রিগেডিয়ারের হাতে অস্ত্র তুলে দেন। এরপর পাকিস্তানি সেনারা একে একে অস্ত্রসমর্পণ করে। পরে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা সার্কিট হাউসে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে বিজয়ের উল্লাস করেন।