মোঃ রোমান- ফরিদপুর প্রতিনিধি

ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ভাঙ্গা পৌর শহরের ভাঙ্গা বাজার থানারোডের কাঠপট্টিতে সরকারী খাস খতিয়ানের জায়গায় দোকান ঘর বরাদ্দের নামে অর্থ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

গত এক সপ্তাহ ধরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রকিবুর রহমান খাঁন ও উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) আল-আমিন মিয়া কয়েক হাজার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দোকান বরাদ্দের আবেদন গ্রহন করেন। হঠাৎ আবেদনকারি ব্যবসায়ীদের না জানিয়ে গত বুধবার দিনভর প্রশাসনের পক্ষ হতে নিজেদের মনোনীত ৮৩ জনের নামে দোকান বরাদ্দ দিয়ে পজিশন বুঝিয়ে দেন।

বৃহস্পতিবার সকালে বরাদ্দ পাওয়া ঐসব ব্যবসায়ীরা দোকান ঘর তুলতে গেলে হাজারো ব্যবসায়ীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় তারা এসিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অর্থ বানিজ্যর অভিযোগ এনে তার অপসারনের দাবিতে মিছিল দিয়ে এসিল্যান্ড অফিস ঘেরাও করে। বিষয়টি জেলা প্রশাসক অতুল সরকারের দপ্তরে পৌছালে তার নির্দেশনায় স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ পরিচালক (ডিডিএলজি) এস.এম. মনিরুজ্জামান বৃহস্পতিবার দুপুরে এসে বরাদ্দকৃত দোকান ঘর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

এসময় ব্যবসায়ীদের শান্ত করে তিনি বলেন, কাউকেই এখনও পর্যন্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় নাই। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের মাঝে পরবর্তী নিদের্শনানুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া হবে। বরাদ্দের বিষয়ে কোন ধরনের অনিয়ম থাকলে তা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে শত শত ব্যবসায়ী ফরিদপুর-৪ আসনের জনপ্রিয় সাংসদ মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনের কাছে অভিযোগ করলে তিনি স্থানীয় সংবাদকর্মীদের মুঠোফোনে জানায়, “দক্ষিনবঙ্গের প্রবেশদ্বার ভাঙ্গা বাজার এলাকা। এখানে প্রতি শতাংস জায়গার দাম কোটি কোটি টাকা। সরকারি এত বড় সম্পত্তি ইউএনও এবং এসিল্যান্ড কারো সাথে আলোচনা না করে কিভাবে বরাদ্দ দেন আমার বুঝে আসেনা’। ভাঙ্গা বাজারের প্রান কেন্দ্র কাঠপট্টি এলাকা সেখানে দোকান বরাদ্দ দিতে হলে পৌরসভা সহ স্থানীয় সাংসদের সাথে আলোচনা করা প্রয়োজনটুকু তারা মনে করে নাই। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা দুইজনে যে কাজটি করেছে এতে করে এলাকায় ব্যবসায়ীদের মাঝে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে। সেই সাথে যে কোন সময় আইন-শৃঙ্গলা ভঙ্গ হতে পারে। এতে যদি কোন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয় তার দায়ভার তাদের দুইজনকেই নিতে হবে। আমি আশা করব যথাযথ কৃর্তপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করে প্রকৃত ভুমিহীন ব্যবসায়ীদের মাঝে দোকান বরাদ্দ দিয়ে পরিবেশ শান্ত করবেন।

বিষয়টি নিয়ে পৌর মেয়র আবু রেজা মো. ফয়েজ জানান, পৌরসভার ভেতরের খাস জায়গায় পৌরসভার মাধ্যমে পৌর মার্কেট নির্মান করে ভুমিহীন ব্যবসায়ীদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়ার নীতিমালা থাকলেও ইউএনও এবং এসিল্যান্ড তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে কাজটি করেছে। এখন এলাকায় দুইটি পক্ষ তৈরী হয়ে যাওয়ায় যে কোন সময় সংঘর্ষ ঘটতে পারে।

জানা যায়, ভাঙ্গা বাজারের প্রান কেন্দ্রে ৫৫ নং সদরদী মৌজার এসএ, দাগ নং ৪২৩,৪২৪ ও বিএস দাগ নং ১৮৫২,১৮৫৩, ১নং খাসঁ খতিয়ানে ৬২ শতাংশ জমি রয়েছে। এই জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ভাঙ্গা ঈদগাহ মাদ্রাসা ও এতিম খানার নামে ১০টি দোকান ঘর বরাদ্দ নিয়ে ব্যবসা করে আসছিল। নতুন করে তাদের বরাদ্দ না দিয়ে গত সপ্তাহে মাইকিং করে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা দোকানগুলো বুলড্রোজার দিয়ে ভেঙ্গে দেয়। ক্ষতিগ্রস্থ্য ব্যবসায়ীরা তড়িঘড়ি করে মালামাল কোন রকমে সরিয়ে নেয়। এরপর দিন রাতারাতি সমস্ত জায়গাটিতে বালু ভরাট করে এ্যাসিল্যান্ড। বুধবার সকালে ইউএনও এবং এসিল্যান্ডের মনোনীত ৮৩ জন ব্যক্তির মাঝে দোকান ঘর বরাদ্দ দেয়।

এতে করে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের না দিয়ে তাদের মনোনিত ব্যাক্তিদের নামে দোকান ঘর বরাদ্দ দেয়ার নামে কোটি কোটি টাকার বানিজ্য করার অভিযোগ উঠে সংশিষ্ট কর্মকর্তারা ও কর্মচারিদের বিরুদ্ধে। প্রতিটি দোকান হতে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে একশ্রেনীর দালালদের সহায়তায় দোকান বরাদ্দর অভিযোগ ওঠে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউএনও ও এ্যাসিল্যান্ড।

পুর্বের ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী দেলোয়ার ও মৃত্যু ডা. শাহাজাহানের স্ত্রী জানান, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ এখানে ব্যবসা করে আসছি। আমরা টাকা দিতে না পারায় আমাদেরকে লিজ দেওয়া হয় নাই।

এব্যাপারে ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রকিকুর রহমান খাঁন জানান, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) ভুমি উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করেছে।

অপরদিকে সহকারী কমিশনার (ভুমি) আল আমিন মিয়া ছুটি জনিত কারনে বৃহস্পতিবার অফিসে হাজির না হওয়ায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।