রাকিব হাসানঃ

রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা হতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূয়া পরিচয়ে টিকটক ব্যবহার করে প্রতারণা, নারীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, ব্ল্যাকমেইল এবং অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে টিকটক রাজ ওরফে মোঃ আব্দুর রাকিব ওরফে খোকন (২৬) কে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। 

র‌্যাবের আইন ও গন্যমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে জানান,  গ্রেফতারকৃত টিকটক রাজ ওরফে মোঃ আব্দুর রাকিব ওরফে খোকন দীর্ঘদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- টিকটক, ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার ইত্যাদির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূয়া পরিচয় দিয়ে আসছিল। বিগত দুই বছর যাবৎ অনলাইন প্লাটফর্মে এসব অপরাধের সাথে যুক্ত রয়েছে। তার নির্মিত ও প্রচারিত মুখরোচক ভিডিও’র মাধ্যমে টিকটকে ইতিমধ্যে ২ মিলিয়নের অধিক ভিউয়ার এবং ফলোয়ার অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সে অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে বিভিন্ন নারীদের প্রলুব্ধ ও প্রতারিত করে অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন এবং পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করে। তাকে গ্রেফতারের সময় তার নিকট থেকে ০১টি মোবাইল, ০৭ টি সীমকার্ড, মেমোরী কার্ড, র‌্যাব ইউনিফর্ম ও স্কাপ, ভূয়া আইডি কার্ড, চেইন সহ বাঁশি, বুট ইত্যাদি জব্দ করে র‌্যাব। গোয়েন্দদের  জিজ্ঞাসাবাদে সে ভার্চুয়াল জগতে ভূয়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন অপরাধ সংশ্লিষ্টতার সম্পর্কে তথ্য দিয়েছে।গ্রেফতারকৃত রাকিব রাজ ভূয়া পরিচয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মত চুল কাটাসহ পোষাক পরত। বিভিন্ন বাহিনীর ড্রেস পরা অবস্থায় ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। সে বিভিন্ন বাহিনীর সচেতনতামুলক ভিডিও সমূহে এডিট করে নিজের ছবির অবস্থান দেখিয়ে প্রচার করে। একইভাবে ফটোশপ ব্যবহার করে বিভিন্ন বাহিনীর কাজকর্মে তার উপস্থিতি প্রচার করে।

 এছাড়া বাহিনীর প্রাত্যাহিক জীবন এর ভূয়া ভিডিও তৈরি করত। সে নিজেকে ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচিতি পেতে অন্যের বাড়ি ও আমবাগানসমূহ নিজের বলে চালিয়ে দিত। এছাড়া বিভিন্ন ইমোশনাল ভিডিও তৈরি করত যাতে তাকে ঠকবাজ না মনে হয়।
রাকিব রাজ ঠকবাজি করে বা প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের নারীদেরকে প্রলুব্ধ করে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করে পরবর্তীতে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়। সে টিকটকে বিভিন্ন মেয়েদের মধ্য থেকে যারা দামী অলংকার পরত বা অবস্থা সম্পন্ন মনে হত তাদেরকে টার্গেট করে। তাদেরকে বিভিন্ন প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে তাদের সাথে ঠকবাজি বা প্রতারণার মাধ্যমে তাদের গলার হারসহ অন্যান্য অলংকার ও অর্থ আত্মসাৎ করে আসছিলো।

আটকৃত টিকটক রাজ টিকটকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজেকে বিজিবি’র একজন ল্যান্স নায়েক পদবীর সদস্য বলে পরিচয় দেয়। বিজিবি থেকে র‌্যাব এ তার পোষ্টিং হয় এবং সে র‌্যাব-১২ তে কর্মরত বলে মিথ্যা পরিচয় দেয়। র‌্যাব-১২ থেকে তার র‌্যাব-৫ এ পোষ্টিং হয় এবং পরবর্তীতে র‌্যাব-৫ হতে ঢাকায় র‌্যাবে পোষ্টিং হয় বলে তার অনুসারীদের জানায়।
গ্রেফতারকৃত টিকটক রাজ এসএসসি পাশ। সে ইতিপূর্বে একটি গার্মেন্টসে চাকুরী করত বলে র‌্যাব জানায়। বর্তমানে সে বগুড়ায় একটি আবাসিক হোটেলের সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে কর্মরত। টিকটকের মাধ্যমে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ০৪টি বিয়ে করে। এছাড়াও শতাধিক নারীকে সে বিভিন্নভাবে প্রতারিত করেছে। সে কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সাথে আপত্তিকর ছবি ধারণ করে মোবাইলে সংরক্ষণ করত এবং ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করত।

গ্রেফতারকৃত টিকটক রাজ র‌্যাব কে জানায়, সে বিভিন্ন টিকটক ভিডিও তৈরি করার জন্য ঢাকায় আসে। মূলত বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর স্থাপনার আশেপাশে টিকটক ভিডিও তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিলো।