তিতাসের সাবেক এমডিসহ ৯ কর্মকর্তার হিসাবের তথ্য তলব দুদকে

যুবলীগের অব্যাহতি দেওয়া চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই কম্পানির ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাঁদের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় তথ্য জরুরি ভিত্তিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল। সম্প্রতি ওই সেল থেকে এসংক্রান্ত চিঠি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়েছে, যা গতকাল সোমবার ব্যাংকগুলোর কাছে পৌঁছে। এদিকে জানা আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির সাবেক এমডিসহ ৯ কর্মকর্তা ও তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য তলব করা হয়েছে। ওই ৯ কর্মকর্তার বিষয়ে ব্যাংকগুলোতে আলাদা চিঠি পাঠিয়ে তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ব্যাংকগুলোতে পাঠানো এনবিআরের চিঠিতে মো. ওমর ফারুক চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী শেখ সুলতানা রেখা, তিন ছেলে আবিদ চৌধুরী, মুক্তাদির আহমেদ চৌধুরী ও ইশতিয়াক আহমেদ চৌধুরীর অ্যাকাউন্ট জব্দ করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জব্দ করতে বলা হয়েছে তাঁর দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান লেক ভিউ প্রপার্টিজ এবং রাও কনস্ট্রাকশন লিমিটেডের ব্যাংক হিসাবও।

এ বিষয়ে চিঠিতে এনবিআর উল্লেখ করেছে, সরকারের রাজস্ব আদায় নিশ্চিত করার জন্য আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে বর্ণিত ব্যক্তি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকে পরিচালিত সব অ্যাকাউন্টে অর্থ উত্তোলন ও স্থানান্তর স্থগিত করতে নির্দেশ দেওয়া হলো। এর আগে ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে ওমর ফারুক চৌধুরীর ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছিল। তিন কার্যদিবসের মধ্যে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ওমর ফারুক ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ওই দিন।

এদিকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে অবৈধভাবে গ্যাস সংযোগ দিয়ে বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানির সাবেক এমডিসহ ৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তাঁদের জানা আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্ত করছে দুদক। তাই অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংকের সব হিসাবের তথ্য তলব করা হয়েছে। তিতাসের সাবেক এমডি প্রকৌশলী মীর মসিউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছেন দুদকের উপপরিচালক মোনায়েম হোসেন। তাঁর সই করা চিঠি ব্যাংকগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

এ ছাড়া অন্য যাঁদের অ্যাকাউন্টের তথ্য তলব করা হয়েছে তাঁরা হলেন তিতাসের ব্যবস্থাপক আতোর আলী, স্ত্রী হামিদা আলী, মেয়ে মিথিলা জাহান অনন্যা ও অর্থী এবং ছেলে আবিব মাহমুদ রিফাত; উপব্যবস্থাপক ফয়জুল ইসলাম, স্ত্রী শরমিন আক্তার, মেয়ে ফারিশতা নূর, ছেলে উযাইব আব্দুল্লাহ; উপব্যবস্থাপক আবু কাওছার, স্ত্রী নাসিমা বেগম, ছেলে জুবায়ের হাসান, ওমায়ের হাসান, ওজায়ের হাসান ও মেয়ে মোসাম্মদ সাঈদা খাতুন; সহকারী ব্যবস্থাপক ইদ্রিস আলী মিয়া, স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার, ছেলে সাদ্দাম হোসেন, সাকিব আহমেদ ও সাজিদুল হক; সুপারভাইজর কাজী সাজ্জাদ হোসেন মিন্টু, স্ত্রী ফারজানা ইয়াসমিন জেবা, মেয়ে কাজী কানিজ ফাতেমা ও তাহমিনা আক্তার জেরিন; সহকারী হিসাব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন, স্ত্রী মমতাজ শিরীন, ছেলে জামিল হোসেন শুভ, তানজিল হোসেন সুপ্ত ও মেয়ে অপরাজিতা হোসেন পুষ্পিতা; কারিগরি কর্মকর্তা তাপস কুমার দে, স্ত্রী রুপা দে, ছেলে প্রতীক দে ও প্রত্যয় দে এবং সহকারী কারিগরি কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ফারাজী, স্ত্রী শেফালি খাতুন ও ছেলে শাফায়েতুল ইসলাম।

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফসহ আরো ১৫ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ

যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাওসারসহ ১৫ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)। তাঁদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা হিসাবও জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হিসাব জব্দের তালিকায় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, তাঁর স্ত্রী সানজিদা রহমান, তাঁদের দুটি প্রতিষ্ঠান টি-টোয়েন্টিফোর গেমিং কম্পানি লিমিটেড ও টি-টোয়েন্টিফোর ল ফার্ম লিমিটেড রয়েছে। তালিকায় আরো রয়েছে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা আবু কাউসার, স্ত্রী পারভীন লুনা, মেয়ে নুজহাত নাদিয়া নিলা এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠান ফাইন পাওয়ার সল্যুশন লিমিটেড।