বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ভবন ভাঙার কার্যক্রম ফের পেছাচ্ছে। সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে ভবনটি ভাঙতে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের দরপত্র ছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী তাদের কার্যাদেশও দেয়া হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ায় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে নতুন করে ভবন ভাঙার কাজ শুরু হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।

বিজিএমইএ ভবন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে প্রথম অবস্থায় কন্ট্রোল ডিমোলেশিং (নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ) পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিল রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। পরে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয় সংস্থাটি। অর্থাৎ ম্যানুয়ালি বিভিন্ন যন্ত্র ব্যবহার করে হাতে ভাঙা হবে বিজিএমইএ ভবন। সেই লক্ষ্যে দরপত্র মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করে রাজউক।

সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভবনটি ভাঙতে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের দরপত্র ছিল এক কোটি ৭০ লাখ টাকা। তারা এ ভবন ভাঙার কার্যক্রম থেকে সরে আসায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ফোরস্টার গ্রুপকে কাজটি দেয়া হয়েছে। ফোরস্টার গ্রুপের দরপত্র এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা।

bgmea-02.jpg

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, শেষ মুহূর্তে সরে যাওয়ায় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্সের কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে টাকা কেটে নিয়েছে রাজউক। প্রথমদিকে যখন বিজিএমইএ ভবন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে কন্ট্রোল ডিমোলেশিং পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার ঘোষণা দিয়েছিল তখন চীনা একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও কথা বলেছিল রাজউক। কিন্তু পরে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজউক। এতে পাঁচটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। এর মধ্যে ছিল ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ, চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ, সামিয়া এন্টারপ্রাইজ, সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স ও পিঅ্যান্ডএস এন্টারপ্রাইজ।

এ কাজে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত হয় সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স। পরে শেষ মুহূর্তে তারা কাজ থেকে সরে দাঁড়ালে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের ফোরস্টার গ্রুপকে কাজটি দেয়া হয়।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে আমরা প্রথম দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা চুক্তিপত্র দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে শেষ সময়ে তারা কাজ থেকে সরে দাঁড়ায়। তাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ফোরস্টার গ্রুপকে কাজ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা কার্যাদেশ দিলেই তারা কাজ শুরু করবে। তবে কার্যাদেশ দেয়ার পর ছয় মাসের মধ্যে ভবনটি ভাঙতে হবে।

প্রথমে কন্ট্রোল ডিমোলেশিং (নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ) পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার সিদ্ধান্তের পর কেন আবার সনাতন পদ্ধতিতে ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত হলো- এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজউকের এক কর্মকর্তা বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙার পক্ষে রাজউক। কারণ নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙার সক্ষমতা রাজউকের নেই। এটি করতে হলে বিদেশি সাহায্যের দরকার হবে। এতে যে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ হবে, সেই টাকা বিদেশে চলে যাবে। আর সনাতন পদ্ধতিতে ভবনটি ভাঙলে রাজউকের আয় হবে। পাশাপাশি যারা ভবনটি ভাঙার কাজ করবে অর্থাৎ যে প্রতিষ্ঠান কাজটি করবে তারাও লাভবান হবে।

সর্বশেষ গত ১২ এপ্রিলের মধ্যে বিজিএমইএ ভবন সরিয়ে নিতে সময় দিয়েছিলেন আদালত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সময় পার হওয়ার পর নির্দেশনা বাস্তবায়নে গত ১৬ এপ্রিল মাঠে নামে রাজউক। বিজিএমইএ ভবনে অভিযানে আসে রাজউক। প্রথম দিনই ভবনে থাকা বিভিন্ন অফিসের মালামাল সরিয়ে নিতে সুযোগ দিয়ে পরবর্তীতে ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়। পরে অবশ্য আরও কয়েক দফা সুযোগ দেয়া হয় মালামাল সরানোর জন্য।

bgmea-02.jpg

২০০৬ সালের দিকে হাতিরঝিলে বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ের মধ্যে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। বিজিএমইএ ভবন অপসারণে আপিল বিভাগের দেয়া এক বছর সময় শেষ হয় গত ১২ এপ্রিল। গত বছরের ২ এপ্রিল সর্বোচ্চ আদালত ভবনটি অপসারণে বিজিএমইএকে এক বছর ১০ দিন সময় দেন।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পের ক্যান্সার’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়।

রায়ে বলা হয়, ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে আবেদনকারীকে (বিজিএমইএ) নির্দেশ দেয়া যাচ্ছে। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলো। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। এরপর ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।