সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে চার মাসে কতিপয় ব্যবসায়ীর পকেটে গেছে ৩২০০ কোটি টাকা, এমনই অভিযোগ করেছে একটি ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনসাস কনজ্যুমারস সোসাইটি (সিসিএস)।

গতকাল রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই তথ্য তুলে ধরে সিসিএস পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াসহ চার দফা দাবি জানিয়েছে।

সংগঠনটি বলছে, সরবরাহ কম ও আমদানি খরচ বেশির অজুহাত দেখিয়ে পেঁয়াজের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হয়েছে। গত চার মাসে ভোক্তাদের কাছ থেকে তিন হাজার ১৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শুধু অক্টোবর মাসেই প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা হাতানো হয়েছে।

‘পেঁয়াজ সিন্ডিকেটের মূল্য নৈরাজ্য’ শিরোনামে করা সংবাদ সম্মেলনে সিসিএস কর্মকর্তারা বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও নিজস্ব পর্যালোচনার ভিত্তিতে তাঁরা এই তথ্য পেয়েছেন।

তাঁরা জানান, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের যৌক্তিক মূল্য ৩০ টাকা এবং অক্টোবর মাসে যৌক্তিক মূল্য ৫০ টাকা ধরে তাঁরা ভোক্তার পকেট কাটার এই চিত্র পেয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন সিসিএসের নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ, সংগঠনের সদস্য শহিদুল ইসলাম ও জয়ন্ত কৃষ্ণ জয়।

পলাশ মাহমুদ বলেন, গত চার মাসে পেঁয়াজের দাম ২৪ বার বেড়েছে। একটি শক্তিশালী চক্র কৃত্রিমভাবে পেঁয়াজের দাম বাড়িয়েছে। সরবরাহ কম ও আমদানি খরচ বেশির কথা বলা হলেও সংকট কিংবা মূল্যবৃদ্ধি কোনোটি ছিল না। তিনি বলেন, ‘ভোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করে দাম বাড়িয়ে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার।’

মাসওয়ারি ভোক্তার ক্ষতির হিসাব তুলে ধরে পলাশ মাহমুদ বলেন, জুলাই মাসে ভোক্তার ক্ষতি ৩৯৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, আগস্টে ৪৯১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, সেপ্টেম্বরে ৮২৫ কোটি ২৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা আর অক্টোবরে এক হাজার ৪৬৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা।

পেঁয়াজ মানুষের ক্ষয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে উল্লেখ করে পলাশ বলেন, সম্প্রতি পেঁয়াজের খুচরা মূল্য ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের পক্ষে এখন পেঁয়াজ দুর্লভ পণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোথাও কোথাও হালি দরে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। ঈদুল আজহার এক মাস আগে জুলাই মাসের ২ তারিখ থেকে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়। সেই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম ওঠানামা করেছে। তিনি বলেন, ঈদুল আজহার আগে কোথাও পেঁয়াজের সরবরাহ ঘাটতি ছিল না। আমদানি খরচও বেশি ছিল না। শুধু ঈদ সামনে রেখে সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় তারা অব্যাহতভাবে দাম বাড়াতে থাকে। দেশের প্রায় ১৮ কোটি ভোক্তা কতিপয় দুষ্কৃতকারীর কাছে জিম্মি—এমন দাবি করে সংগঠনটির কর্মকর্তারা বলেছেন, এরই মধ্যে চট্টগ্রামে ১৩ সদস্যের একটি সিন্ডিকেট শনাক্ত করা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে সিন্ডিকেটের হাত থেকে ভোক্তাকে মুক্ত করতে সিসিএসের পক্ষ থেকে চারটি দাবি জানানো হয়। এগুলো হলো—ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মতো মূল্য সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো বা দ্রুত ও কার্যকর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া, দ্রুত একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পেঁয়াজের সর্বোচ্চ মূল্য নির্ধারণ করা, পেঁয়াজ ছাড়াও যেকোনো পণ্যে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হলে সরকার থেকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ মূল্য ঘোষণা করা, যাতে সিন্ডিকেট করে মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে এবং পণ্য বা সেবার ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে অংশীজনদের নিয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে একটি সেল গঠন ও সার্বক্ষণিক তদারকি করা।